এছাড়াও ওকালতনামায় স্বাক্ষর ছাড়া জামিন নিয়ে আসামি কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘটনায় গত ১৯ অক্টোবর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার খন্দকার আল মামুনকে সতর্ক করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: বিদেশে অর্থপাচার করে বাড়ি-গাড়ি ক্রয়কারীদের নিয়ে নতুন প্রতিবেদন জমার নির্দেশ
রবিবার ওই আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. বিচারাধীন মামলায় বা দণ্ডিত কারাবন্দিদের নাম, ঠিকানা, মামলার নাম্বার, মামলার ধারা, কোন আদালতে মামলা বিচারাধীন বা কোন আদালতের রায়ে কী দণ্ড হয়েছে, কারা মহাপরিদর্শক, জেলার, সহকারী জেলারকে সেসব তথ্য রেজিস্ট্রারে রাখতে হবে।
২. কারা কর্তৃপক্ষকে দণ্ডিত বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির কারাগারে আসা এবং বের হওয়ার তারিখ রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৩. যথাযথভাবে যাচাইয়ের পর নিশ্চিত হয়ে কারাকর্তৃপক্ষ বা কারা কর্মকর্তাকে দণ্ডিত ব্যক্তি বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির ওকালতনামায় সই করতে হবে বা সিল দিতে হবে।
৪. সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ অথবা কারা কর্মকর্তা ওকালতনামার যেখানে সই ও সিল দিবেন তার পাশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পুরো নাম, কারাগারের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল ফোন নাম্বার উল্লেখ করবেন।
৫. কোনো অশোভন, অযাচিত পরিবেশ-পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সে জন্য যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কারাগার ও কারা প্রাঙ্গনের শান্তি, নিরাপত্তা বজায় রাখতে কারাকর্তৃপক্ষকে সবসময় সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: দুর্নীতিবাজ রুই-কাতলদের আইনের আওতায় আনতে হবে: হাইকোর্ট
৬. কারাগারের ভেতরে সব ধরনের অবৈধ মাদক দ্রব্যের সরবরাহ বন্ধে কারা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. দর্শনার্থীদের কঠোরভাবে তল্লাশি করতে হবে এবং দর্শণার্থী কারো কাছে কোনো মাদকদ্রব্য, অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. কারা আইন, ১৮৯৪, কারাবন্দি আইন, ১৯০০ এবং বাংলাদেশ জেলকোডসহ সংশ্লিষ্ট সব আইনের বিধান কারা কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
প্রতি তিন মাস পর পর এ রায় বাস্তবায়নের প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবরে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক কাজলকে কেন জামিন নয়: হাইকোর্টের রুল
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, আইজি প্রিজন, সকল জেলার ও ডেপুটি জেলারের কাছে আদেশটি পাঠাতে বলা হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, এনআরবি ব্যাংকের ১১ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে জিওলোজাইজ সার্ভেয়ার করপোরেশনের প্রোপাইটর অ্যান্ড চিফ সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান কনকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক।
আরও পড়ুন: দেশের সব ভাস্কর্যের সুরক্ষা চেয়ে হাইকোর্টে রিট
এ মামলায় গত ১৫ জুন হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। তবে সে সময় করোনার কারণে হাইকোর্টের এফিডেফিট শাখা বন্ধ থাকায় আদালত বলেছিলেন নিয়মিত আদালত চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এফিডেফিট করে দাখিল করতে। পরে নিয়মিত আদালত চালু হলে এফিডেফিট করতে গিয়ে দেখে তার একটি মামলার ওকালতনামায় জেলারের স্বাক্ষর নেই। বিষয়টি তখন আদালতের নজরে আনা হয়। আদালত ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিয়ে পরবর্তী দিনে এফিডেফিট আদালতে দাখিল করতে বলেন। এরপর আসামিপক্ষ ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর সম্বলিত ডকুমেন্ট দাখিল করে। বিষয়টি দেখে আদালতের সন্দেহ জাগে। আসামি জামিন নিয়ে বাইরে থেকে ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর কিভাবে পেল। তখন আদালত ডেপুটি জেলার খন্দকার মো. আল মামুনকে তলব করেন। পরে ১৯ অক্টোবর ওই ডেপুটি জেলার হাইকোর্টে হাজির হয়ে তার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আদালতকে তার আইনজীবী জানান, কারাগারে একসাথে ৩০০ থেকে ৪০০ ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। তখন বিষয়টি দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বিধায় এ ভুল হয়েছে। হাইকোর্ট তাকে ক্ষমা করেন। আর জামিন পেয়ে বের হওয়ায় আসামি মিজানুর রহমানকে চার সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। ওই আদেশের অনুলিপি রবিবার প্রকাশ করা হয়।