দুদক থেকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিলের পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আজ ২০১৬ হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে যেসব মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে তার তালিকা আদালতে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন: সরকার দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশ করতে পারবে না: হাইকোর্ট
দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে এ সময় আদালত বলে, ‘পুরাতন কাহিনি বলে লাভ নেই। আমাদের আদেশের পর কী করেছেন তা দেখতে চাই। তার একটা ফিরিস্তি দেন। যারা অবৈধভাবে দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে গাড়ি-বাড়ি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটি জানতে চাই। নতুন কী করেছেন সেটা বলেন।’
আদালত এ সময় আরও বলে, ‘যেসব সংস্থা আছে, তারা যদি সরকারকে সহায়তা করে তাহলে কেন অর্থ পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা জানা যাবে না? কোর্টের কাজ হলো সরকার ও জনগণকে সহযোগিতা করা।’
আরও পড়ুন: দুর্নীতিবাজ রুই-কাতলদের আইনের আওতায় আনতে হবে: হাইকোর্ট
আদালত বলে যে তারা দেশ ও দেশের মানুষকে সহযোগিতা করতে চায়। অর্থপাচার নিয়ে গণমাধ্যমে যে রিপোর্ট হয়েছে তা অশনি সংকেত বলেও উল্লেখ করে হাইকোর্ট।
‘এসব দেখার পর বিচারক থেকেও যদি এখন কোনো দায়িত্ব পালন না করি এক সময় মানুষ আমাদের কাছে প্রশ্ন করবেন বিচারকের দায়িত্ব থেকে কী করেছেন। তখন আমরা লজ্জায় পড়ে যাব,’ বলেন ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চের বিচারপতিরা।
দেশে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে হয়ত অল্প কিছুই মানুষই এ অর্থপাচারের সাথে জড়িত উল্লেখ করে আদালত বলে, ‘পাচারকারীরা অনেক ভীত। যারা কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মায়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছেন তাদের নাম জানতে চাই। বিচারটা না করেন, নামগুলোতো জানাতে হবে। পত্রিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের নামটা জাতি জানতে পারবে না? আমরা তো শুনলাম বেগমপাড়া, সাহেবপাড়া আছে। আর কত কী পাড়া আছে।’
আরও পড়ুন: অর্থ পাচারকারীদের দেশের শত্রু উল্লেখ করে তাদের তথ্য চেয়েছে হাইকোর্ট
বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে বেশি অর্থপাচার করেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চায়।
আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে হাইকোর্টের ১১ নির্দেশনা
এরপর হাইকোর্টের আদেশের জবাব তৈরি করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দুবার বৈঠক করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও এনবিআরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের আদেশের ধারাবাহিকতায় আজ হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় দুদক। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না হয়ে ফের নতুন করে তালিকা দিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আদালত।
আরও পড়ুন: রোগীদের অভিযোগ তদারকিতে কমিশন কেন নয়: হাইকোর্ট
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন আদালতে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সময় চেয়েছে। তারা বলেছে বিদেশি মিশনগুলোর কাছ থেকে নির্দেশনা পেলে অর্থপাচারের প্রতিবেদন জমা দেবে।
তিনি আরও জানান, বিএফআইইউ জানিয়েছে যে বাইরের দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটগুলোর সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির কারণে তারা অর্থপাচারের তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না। তথ্য চেয়ে বিএফআইইউয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।