সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপিকে) বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে জমা দেবেন।
আরও পড়ুন: দুদককে ঢোঁড়া সাপ হলে হবে না, জাত সাপ হতে হবে: হাইকোর্ট
রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির জানান, রিটটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।
তিনি জানান, ১৪৫ পৃষ্ঠার রিট আবেদনের সাথে সংযুক্তি আকারে ১ হাজার ৫২২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট (মোট ১ হাজার ৬৬৭ পৃষ্ঠা) দেয়া হয়েছে। রিটে আটটি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, পুলিশের গৌরবময় অর্জনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা বিধানের বর্তমান আইনি কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণ দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৫৮৯টি এ সংক্রান্ত ঘটনা তুলে ধরা এবং ঘটনাগুলোর সংবাদ রিট আবেদনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রিটে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, দৃষ্টান্ত হিসেবে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৬টি মামলার কপি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা চূড়ান্ত রিপোর্ট বা আপোষের মাধ্যমে অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঢাকার বায়ু দূষণ: হাইকোর্টের আরও ৩ দফা নির্দেশনা
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘তদন্ত’ হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্ত হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠু তদন্ত সংবিধানের ৩৫ (৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের ওপরই ন্যস্ত। ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ২০০৭ সালে ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সেই খসড়া অধ্যাদেশ আজও আইনে পরিণত হয়নি।
তিনি জানান, রিটে ৮টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও নীতিমালা সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব আন্তর্জাতিক দলিলে পুলিশের অপরাধ তদন্তে আলাদা কর্তৃপক্ষ/ কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন কার্যকর রয়েছে। ২০০৬ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বিখ্যাত ‘প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা প্রদানের নজিরও যুক্ত করা হয়েছে রিটে।
এর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।
আরও পড়ুন: সাক্ষর জালিয়াতির মামলায় এক ব্যক্তিকে পুলিশে দিল হাইকোর্ট
রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শিকদার মাহমুদুর রাজি, শ্যাম সুন্দর দাস, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাজ্জাদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. মোর্শেদ মীর, জামিলুর রহমান খান, শেখ নাসের ওয়াহেদ (সিমন), মো. আল-আমিন, আল রেজা মো. আমির, ইমরুল কায়েস, অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার, মো. শাহাবুদ্দিন খান (লার্জ), মো. দুলাল মিয়া, মো. আব্দুল আলীম, মো. হুমায়ুন কবির, জি এম মুজাহিদুর রহমান, মো. মতিয়ার রহমান প্রমুখ।