‘শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান ও উপদপ্তর সম্পাদক সজীবুর রহমান সজীবের’ ফাঁস হওয়া তিনটি অডিও কলের একটি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
২২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান উপদপ্তর সম্পাদক সজীবুর রহমানকে জুমার নামাজ পড়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলতে বলেন। ফোন দিলে যেন ফোন ধরে, এ কথাও বলেন। একাডেমিক ভবনে নির্মাণাধীন লিফটের খবর নিতেও বলেন সজীবকে। ১৮ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের দিকে আবারও ইঞ্জিনিয়ার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ফোন না ধরার কথা আসে।
কল রেকর্ডের এক মিনিট ১২ সেকেন্ডের দিকে নির্মাণাধীন ছাত্রী হলের কথাও উঠে আসে এবং সেখানে মোস্তফা কামালের (সেন্টার অব এক্সিলেন্সের ঠিকাদারি পক্ষ) কথা বলা হয় এবং তার নম্বর আছে কিনা জানতে চায়। চার মিনিট ৪০ সেকেন্ডের দিকে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃন্ময় দাস ঝোটন ও পরিবেশ-বিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিলের নাম উল্লেখ করেন সজীব। সেখানে ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি ও টাকা নেয়ার কথা জানা যায়।
'আমারে (খলিল) ভাই ডাকাইছে মানে? আমি যদি না আসি..., আর টেন্ডারবাজি করো তোমরা ছয়জনে, দোষ হয় আমাদের। আমরা কী করছি?' খলিল এভাবে ঝোটনকে বলেছিল বলে সাধারণ সম্পাদককে জানায় সজীব। এ ছাড়া খলিল ঝোটনকে বলেছিল, 'তুমিই তো কালকে কইছ টাকা পাইছে ১৫ লাখ।' এই টাকা পাওয়ার কথা গেস্টরুমে ঝোটন বলেছিল বলে উল্লেখ করে সজীব। সাধারণ সম্পাদক আট মিনিট ৩০ সেকেন্ডের দিকে জুনিয়রদের ছাত্র রাজনীতি থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার অধিকারের কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'তারা এতদিন ধরে পলিটিক্স করছে। তাদের রাইট (অধিকার) আছে না ফাইন্যান্সিয়াল গেইনার (আর্থিক সুবিধা) হওয়ার?' 'ছাত্রলীগের সহসভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক খলিলকে বলে দিসে, সেন্টার অব এক্সিলেন্সে ডিল (চুক্তি) করার পর সে আর কোথাও ডিল করবে না' বলে উল্লেখ করেন সজীব।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কথা উঠলে সজীব জানায়, 'সভাপতি নাকি ঢাকায় গিয়ে কমিটি আটকে রাখছে।' সভাপতিকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিতে চায় না বলে উল্লেখ করে সজীব। তখন সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, 'এটা করা যাবে না। তাকে গেস্টরুমে নিয়ে বিবস্ত্র করে ছবি তোল ও ভিডিও করে রেখে দিয়ে আসসালামু আলাইকুম বলে বিদায় করে দিবে...।'
'কোনো একসময় জুতার বাড়ি দিয়ে ভিডিও করে রেখে দিতে বলে'- সেটাও উল্লেখ করেন তিনি।
অডিও কলের শেষের দিকে সাধারণ সম্পাদক সজীবকে সব সাইটে গিয়ে গাছপালার হিসাব করতে বলেন এবং বলেন, 'ওদের কথা শুনিস না। ওদের কথা শুনলে জলে ডুবতে হবে।'
২০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের দিকে তিনি আরও বলেন, 'এখন যদি প্রেশার ক্রিয়েট করতে না পারিস, তাহলে সেন্টার অব এক্সিলেন্সের না, টেন্ডার অব শাহজালাল ইউনিভার্সিটির ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার... (অস্পষ্ট)।' তবে এখন প্রেশার ক্রিয়েট করতে না পারলে তারা মাইনাস হয়ে যাবে বলে সজীবের কণ্ঠে এই কথা শোনা যায়।
সাধারণ সম্পাদক পরে বলেন, 'এখন পেছনে আসার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু খলিল এবং মামুনকে সামনে রাখ।'
একদম শেষে বলেন, 'ভবিষ্যতে কাজগুলো তোদের কাছে কীভাবে যায়, সরাসরি সেই ব্যবস্থা করতেছি এবং তুই (সজীব) ডোপ টেস্টটা করে ফেল তাড়াতাড়ি।'
অডিও কলের এই রেকর্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, `সজীবের অপহরণকারী ছাত্রদল ক্যাডাররা তার কাছ থেকে তিন মাস আগে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছিল। সেখান থেকে দীর্ঘদিনের অনেকগুলো অডিও কেটে জোড়া লাগিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে। অলরেডি এটার বিরুদ্ধে একটা মামলা চলমান আছে।’
তিনি বলেন, ‘সজীব আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। সে এখনও অসুস্থ। সুস্থ হলে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
চাঁদাবাজির বিষয়ে ইমরান খান অডিও রেকর্ড শুনে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, কোথায় আমি চাঁদাবাজির কথা বলেছি?