অবনমন থেকে বাঁচার প্রতিযোগিতায় থাকা লেগানেসের বিপক্ষে জয় পেতে রিয়াল মাদ্রিদের যে খুব একটা কষ্ট হবে না— অনেকে আগে থেকেই তা অনুমান করেছিলেন। তবে মাঠের খেলায় সেই পুঁচকে দলের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিতে ঘাম ছুটে গেছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের। এতে করে বার্সেলোনার ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে বর্তমান লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা।

শনিবার (২৯ মার্চ) রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে লা লিগার ২৯তম রাউন্ডের ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতেছে রিয়াল।

জোড়া গোল করে এদিন দলকে জয়ের পথ দেখান কিলিয়ান এমবাপ্পে। মাঝে আরেকটি গোল করেন জুড বেলিংহ্যাম।

তবে ম্যাচের প্রথমার্ধে চমক দেখিয়ে রিয়ালকে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেয় লেগানেস। ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোদের বিশ্রামে রেখে আনচেলত্তির সাজানো দলের বিপক্ষে এদিন শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে বোরহা হিমেনেসের শিষ্যরা।

আরও পড়ুন: আতলেতিকোর অপরাজেয় যাত্রা থামিয়ে ‘মাইলফলক’ রাঙাল রিয়াল

স্বাগতিকদের একের পর এক আক্রমণ ফিরিয়ে দিলেও খেলার আধঘণ্টা গড়াতেই পেনাল্টি পেয়ে যায় রিয়াল। ৩০তম মিনিটে বক্সের মধ্যে আর্দা গুলেরকে ফেলে দিয়ে দলকে বিপদে ফেলে দেন লেগানেসের অস্কার রদ্রিগেস। ‍দুই মিনিট পর সফল স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন এমবাপ্পে।

তবে এর পরের মিনিটেই অভানীয় এক গোল করে লেগানেসকে সমতায় ফেরান দিয়েগো গার্সিয়া। সতীর্থের বাড়ানো বল প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে লেগে দূরের পোস্টের দিকে চলে যায়। সেখানে একপ্রকার একা দাঁড়িয়ে ছিলেন গার্সিয়া। ট্যাপ-ইনে বল ঠিকানায় পাঠানো ছিল তার বাঁ পায়ের খেল।

গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় সফরকারীদের। এরপর ৪১তম মিনিটে বের্নাবেউকে স্তব্ধ বরে দিয়ে এগিয়ে যায় তারা। এ সময় বাইলাইন থেকে অস্কার রদ্রিগেসের পাস ছয় গজ বক্সের মধ্যে পেয়ে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফরোয়ার্ড দানি রাবা।

ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় লেগানেস।

বিরতির পর মাঠে ফিরেই সমতায় ফেরে রিয়াল। ৪৭তম মিনিটে জোরালো শটে রিয়ালের আক্রমণ শাণিয়ে দেন বেলিংহ্যাম। সেটি গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলে ফিরতি বলে ব্রাহিম দিয়াস শট নিলে এক ডিফেন্ডার তা ঠেকিয়ে দেন। তবে তারপর বল পেয়েই লক্ষ্য খুঁজে নেন বেলিংহ্যাম।

সমতায় ফেরার পর আক্রমণ অব্যাহত রাখে রিয়াল। তবে সাফল্য মিলছিল না কিছুতেই। ৬২তম মিনিটে দিয়াস ও গুলেরকে তুলে ভিনি ও রদ্রিগোকে নামান আনচেলত্তি। এতে আরও বাড়ে রিয়ালের আক্রমণের ধার।

এরপর ৭৬তম মিনিটে অসাধারণ এক গোলে দলকে কাঙ্ক্ষিত লিড এনে দেন এমবাপ্পে। ডি-বক্সের একটু বাইরে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে বেলিংহ্যামের সঙ্গে আলতো ছোঁয়ায় ওয়ান-টু করেই জোরালো শট নেন কিলিয়ান, আর রক্ষণ দেওয়ালের ফাঁক গলে বুলেট গতিতে বল জড়িয়ে যায় জালে।

এর ফলে লা লিগায় চলতি মৌসুমে এমবাপ্পের গোলসংখ্যা হলো ২২টি। এছাড়া সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তার গোল হয়ে গেল ৩৩টি।

রিয়ালের জার্সিতে অভিষেক মৌসুমে ৩৩ গোল করে ক্লাব কিংবদন্তি ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পাশে বসেছেন তিনি। ৪৫ ম্যাচ খেলে নিজের আদর্শকে ছুঁলেন এমবাপ্পে। রোনালদো এই রেকর্ড গড়েছিলেন ১০ ম্যাচ কম খেলে। তবে লস ব্লাঙ্কোসদের জার্সিতে এটিই অভিষেক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড নয়, ৩৭ গোল করে এই তালিকায় সবার উপরে চিলির কিংবদন্তি ইবান সামোরানো। অবশ্য এই সব ঠিকঠাক থাকলে এমবাপ্পের তাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: আরও একটি প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে শীর্ষে ফিরল বার্সেলোনা

পিছিয়ে পড়ার পর অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার চেষ্টায় ফের আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে লেগানেস, দুয়েকবার দারুণ সুযোগও পায় দলটি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর গোল পাওয়া না হয়ে উঠলে হার নিয়েই তাদের ঘরে ফিরতে হয়।

এর ফলে ২৯ ম্যাচে ১৯ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনাকে আবারও ধরল রিয়াল মাদ্রিদ। অবশ্য এক ম্যাচ কম খেলা বার্সেলোনা আজ (রবিবার) রাতে জিরোনার বিপক্ষে হার এড়াতে পারলে আবারও ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারবে।

তবে কপাল পুড়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচ অপরাজিত থাকা দলটি মার্চে এসে যেন নিজেদের হারিয়ে ফেলেছে! সবশেষ পাঁচ ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে তারা। সেটিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় লেগে, যেখানে পরে টাইব্রেকারে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হারতে হয় তাদের।

শনিবার রাতেও কাতালান ক্লাব এস্পানিওলের বিপক্ষে জিততে পারেনি তারা। ১-১ গোলে ড্র করেছে দলটি। এর ফলে দুই পয়েন্ট খুইয়ে কার্যত শিরোপার লড়াই থেকে খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা।

২৯ ম্যাচে ১৬ জয় ও ৯ ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৫৭। অর্থাৎ লিগের ৯ ম্যাচ বাকি থাকতে রিয়াল-বার্সার চেয়ে ৬ পয়েন্টে পিছেয়ে পড়েছে সিমিওনের শিষ্যরা। আর বার্সেলোনা জিরোনার বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচটি জিতলে আতলেতিকোর সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান বেড়ে হবে ৯।