রূপসা উপজেলার নৈহাটি গ্রামের নাজিম উদ্দিন একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মহামারি করোনার সময় চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়ে তিনি বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। উচ্চমূল্যের এ ফসল চাষ করে স্বল্প সময়ে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেয়ে নাজিমউদ্দিন এখন জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে কৃষক
সরেজমিনে দেখা গেছে, রূপসা উপজেলা সদর কাজদিয়া গ্রামের তার ২০ শতক জমিতে প্রতিটি গাছে সবুজ, হলুদ আর লাল রঙের ক্যাপসিকাম ঝুলে আছে। অধিক ফলনের আশায় ক্যাপসিকাম খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষি নাজিম উদ্দিন। যত্ন আর পরিচর্যা পেয়ে ক্যাপসিকামের চারাগুলো হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে।
চাষি নাজিম উদ্দিন জানান, চারা রোপণের দু’মাস পর থেকেই গাছে ফল ধরা শুরু হয়। ২০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে বীজ কেনা, জমি প্রস্তুত, সার, বালাইনাশক ও মালর্চিং পেপার কেনা এবং শেড তৈরিসহ সব মিলিয়ে তার প্রায় ২২-২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদিও নিজেরা কাজ করায় তার শ্রমিকের খরচ লাগেনি। চারা রোপণের দু’মাস পর থেকে তিনি ক্যাপসিকাম বিক্রি শুরু করেন। এ পর্যন্ত ১০০ কেজি ক্যাপসিকাম পাইকারি বাজারে ২০০ টাকা কেজি দরে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনা চাষে আলু আবাদ
এখন খেতে যে পরিমাণ ফসল আছে তাতে আরও প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তিনি অন্য বেকার যুবকদের উদ্দেশ করে বলেন, বেকার ও অলস সময় অতিবাহিত না করে যাদের সামান্য জমি আছে, তাতে ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন লাভজনক সবজি আবাদ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি বিক্রি করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আনা সম্ভব।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান জানান, ক্যাপসিকাম উচ্চ মূল্যের একটি নতুন ফসল। এ উপজেলায় প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন তরুণ ও বেকার যুবক নাজিম উদ্দিন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বেগুন খেতের আড়ালে গাঁজা চাষ!
বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় এ উপজেলায় আগামীতে ক্যাপসিকামের চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
কৃষিবিদরা বলছেন, ক্যাপসিকাম এদেশে সবার কাছে মিষ্টি মরিচ নামে পরিচিত। এ মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত এর ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। ক্যাপসিকাম সবুজ, লাল, হলুদ, ও বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। এতে মরিচের ঘ্রাণ আছে। তাই সালাদের জন্য এ মরিচ খুবই উপযুক্ত। ক্যাপসিকামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও জিংক রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে বাণিজ্যিকভাবে ‘টিউলিপ’ চাষ
প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়া ছাড়াও লাভজনক ও অর্থকরী ফসলের মধ্যে ক্যাপসিকাম অন্যতম। এছাড়া ক্যাপসিকাম বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর। এর চাষ করে অনেক ফসলের তুলনায় কম সময়ে বেশি লাভ করা যায়। তাই দেশের বেকার যুবকদের ক্যাপসিকাম চাষের ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এতে আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে এবং দেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে। দেশ হবে সমৃদ্ধ।