অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার অস্বাস্থ্যকর, যা বিভিন্ন রোগ, বিশেষত হৃদরোগের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের কারণে ঘরে বন্দী থাকায় বাইরে মানুষের শারীরিক কর্মকাণ্ড কমেছে। তাই এখন এই জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে ঝুঁকি বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে (বিএফএসএ) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাবারগুলোতে ট্রান্স ফ্যাট সীমিত করার জন্য নিয়মকানুন জারি করার আহ্বান জানিয়েছে। যা মহামারি কোভিড -১৯ সঙ্কটের মধ্যেও গুরুতর অসুস্থতা থেকে কার্ডিওভাসকুলার রোগের (সিভিডি) রোগীদের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনরা দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে খাবারে ২ শতাংশের বেশি ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, হৃদরোগে আক্রান্তরা কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
করোনারি হৃদরোগের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ মারা যায়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর উচ্চ মাত্রার ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে প্রায় আট হাজার মানুষ মারা যায়।
প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) তথ্য অনুসারে, দুর্ভাগ্যক্রমে, বাংলাদেশ ট্রান্স ফ্যাটগুলোর মাত্রা সীমিত করার ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসে খাবারে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো নীতিমালা করা হয়নি।
ডব্লিউএইচও ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পজাত উৎপাদিত খাদ্য থেকে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড হ্রাস করার বিশ্বব্যাপী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলসহ প্রায় ৩০টি দেশ ইতোমধ্যে খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বাধিক সীমা নির্ধারণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আরও ২৪টি দেশ সীমাটি ২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তবে ২০১৮ সালে ডব্লিউএইচও ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূলের যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ তা বাস্তবায়ন থেকে এখনও অনেক দূরে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে বিএসটিআই সহকারী পরিচালক এনামুল হক বলেন, স্থানীয় বাজারে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত শিল্পজাত উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট নীরব ঘাতক।
খাবারে উচ্চ মাত্রার ট্রান্স ফ্যাট খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বৃদ্ধি করে এবং মানবদেহে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) হ্রাস করে, তিনি বলেন।
‘উচ্চ মাত্রার ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ফলে রক্তনালীতে ফলকের সৃষ্টি হতে পারে, রক্তের প্রবাহকে ব্যাহত করে, তাড়াতাড়ি হার্ট অ্যাটাক এবং অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ট্রান্স ফ্যাটগুলো প্রায়শই প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, স্ন্যাকস, ভাজা খাবার আইটেম, বিস্কুট, কুকিজ, মার্জারিন এবং অন্যান্যগুলোতে পাওয়া যায়। মানুষ সাধারণত রমজানে ট্রান্স ফ্যাট আইটেম বেশি গ্রহণ করে,’ তিনি যোগ করেন।
এনামুল হক বলেন, যেহেতু মানুষ এখন ঘরে অবস্থান করছে এবং শারীরিক কর্মকাণ্ড কমে গেছে, তাই সুস্থ থাকার জন্য তাদের এ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ‘করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে মাসব্যাপী ছুটির কারণে খাবারের অভ্যাস বদলেছে। মানুষ ঘরে বসে আছেন। সুতরাং, সচেতনতা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি বলেন।
তিনি বলেন, তারা একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন।
‘যেহেতু বাংলাদেশিরা ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার সম্পর্কে সচেতন নয়, তাই এ জন্য একটি নীতিমালা আবশ্যক। কোম্পানিগুলোকে খাদ্যসামগ্রীতে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহারের নিয়ম প্রয়োগে বাধ্য করতে হবে,’ তিনি যোগ করেন।
বিএসটিআই কর্মকর্তা আরও যোগ করেন যে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে ডেনমার্ক ট্রান্স ফ্যাটকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।। যদিও ইউএসএ কোনো নির্দিষ্ট মাত্রা ঠিক করেনি, তারা ভোক্তাদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেয়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোরশেদ আহমেদ বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান খাবারে ট্রান্স ফ্যাট সীমাবদ্ধতা ২ শতাংশের মধ্যে আনতে গত জানুয়ারিতে একটি নীতিমালা তৈরি শুরু করে।
‘ভোজ্যতেল এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্যে ট্রান্স ফ্যাট মাত্রা হ্রাস করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে একটি ১০ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি বিশেষজ্ঞ, অংশীজন এবং ভোক্তাদের সাথে দুটি বৈঠক করেছে,’ তিনি বলেন।