বিনিয়োগকারীদের সামনে বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানী খাতটির সম্ভাব্যতা তুলে ধরতে ব্যর্থতার জন্যই এই লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেদা) মতে, ১১৫২ মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মোট ২.৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি ছোট বায়ু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপ (যার প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট) দরপত্র এবং পুন:দরপত্র প্রক্রিয়ায় আটকে রয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদার সমাধান কি সৌরশক্তি?
বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপিডিবি, বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য খুলনার দাকোপ (মংলার নিকটবর্তী), চাঁদপুর এবং কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকত- তিনটি জায়গার জন্য দরপত্র আহ্বান করে।
একক দরদাতা হিসেবে দুটি জায়গার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় চীনা প্রতিষ্ঠান এনভিশন এনার্জি। পরে কেবলমাত্র মংলার কাজের জন্য মনোনিত হয় তারা। এরপর সরকার আবারও বাকি দুটি জায়গার জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করেছে-ইনানী সমুদ্র সৈকত এবং চাঁদপুর।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. জহির আহমেদ জানান, দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগে বিপিডিবি ১০০ মেগাওয়াটের অফশোর বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও কোনো প্রতিষ্ঠান তাতে অংশ নেয়নি।
সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সামনে বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে বায়ু শক্তির ওপর অবস্থান-নির্দিষ্ট উপাত্ত এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী সংস্থার ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন নবায়নযোগ্য জ্বালানী শিল্পের বিশেষজ্ঞরা।
স্রেদা’র সাবেক সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘বায়ু শক্তির সম্ভাবনার মূল্যায়ন করতে বিভিন্ন সংস্থা গবেষণা পরিচালনা করেছিল, তবে অবস্থান অনুসারে বিশদ এবং নির্দিষ্ট ডেটা খুঁজে পেতে পরবর্তী গবেষণা পরিচালনা করার জন্য কোনো ফলো-আপ প্রক্রিয়া বজায় রাখা হয়নি।’
জোবায়ের ইউএনবিকে বলেন, ‘সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সামনে অর্ধ-সম্পন্ন তথ্য উপস্থাপন করায় তারা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন এবং তাদের অর্থায়নকারীরা প্রকল্পের কার্যক্ষমতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। এ কারণেই বায়ু শক্তিতে প্রতিক্রিয়া এতো দুর্বল।’
বায়ু শক্তি অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘তথ্যে যদি ১০ শতাংশও ভুল থাকে, এটির বড় প্রভাব রয়েছে এবং চূড়ান্ত ফলাফলে ৩০-৪০ শতাংশের পরিবর্তন থাকতে পারে।’
স্রেদা এবং বিপিডিবি’র কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে বায়ু শক্তির সম্ভাবনা যাচাই করার জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।
সর্বশেষ গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) আর্থিক সহায়তায় দেশটির ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির (এনআরইএল) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়, যাতে সারা দেশে বায়ু শক্তির সম্ভাবনাযুক্ত নয়টি অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শিগগিরই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে সরকার: এলজিআরডিমন্ত্রী
এনআরইএল তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, বাংলাদেশের নয়টি এলাকার বাতাসের গড় গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৫ থেকে ৬ মিটার। বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য যাকে আদর্শ বলছে মার্কিন এই প্রতিষ্ঠানটি। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ করা বায়ুপ্রবাহের তথ্য পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত ফল জানানোর দায়িত্ব ছিল ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির ওপর।
সরকারের উইন্ড ম্যাপিং প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাপিং দরকার ছিল। সাধারণত ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার/সেকেন্ড হলেই বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। কিন্তু বাতাসের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৫ থেকে ৬ মিটার হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব।