গ্রেপ্তার অমিত চন্দ্র শীল (১৯) গলাচিপা উপজেলার আমখোলা গ্রামের হরিচন্দ্র শীলের ছেলে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উপজেলার সিংহেরাকাঠি গ্রামের নবম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অমিত চন্দ্র শীলের সম্পর্ক গড়ে উঠে। অমিত ঢাকার কেরাণীগঞ্জে একটি সেলুনে নরসুন্দর হিসেবে কর্মরত। এক মাস ১০ দিনের মাথায় তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার অমিত ঢাকা থেকে পটুয়াখালী শহরে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে তার প্রেমিকাকেও সেখানে আসতে বলে।
ওসি জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে প্রেমিকাকে জোড় করে ওই হোটেলের একটি কক্ষে ধর্ষণ করে। পরে হোটেল থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থী তার বাবাকে ফোন করে ঘটনা জানায়।
আরও পড়ুন: ও লেবেলের শিক্ষার্থী ‘ধর্ষণ’: আটক তিনজন মুক্ত
ওই দিন রাতেই ভোক্তভোগীকে তার বাবা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করেন। শনিবার রাতে ভোক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে অমিতকে আসামি করে বাউফল থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ গলাচিপার আমখোলা এলাকা থেকে রাতেই অমিতকে গ্রেপ্তার করে। রবিবার অমিতকে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
ভোক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওসি জানিয়েছেন।
পুরো দেশের চিত্র
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ
কম্বল দেয়ার কথা বলে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
আরও পড়ুন: ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যা’: মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ১
ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যা’: মামলায় আসামির স্বীকারোক্তি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।