বাংলাদেশ যথেষ্ট মানুষের জন্য সীমান্ত খোলা রেখেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন সীমান্ত মোটামুটি সিল করে রেখেছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা শুনেছি রাখাইন আর্মি ও মিয়ানমারের আর্মির মধ্যে সহিংসতা হওয়ায় বৌদ্ধ ও হিন্দুসহ বিভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে আমরা আর কাউকে নেব না।’
বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. মোমেন।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তাতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি খুবই খুশি।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোলিকে বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নজির স্থাপন করেছেন। তা না হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় গণহত্যা হতো। যদিও ইতিমধ্যে ২৪ হাজার রোহিঙ্গা মারা গেছেন এবং ১৮ হাজার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ১ লাখ ১৫ হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ১ লাখ ২০ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
আলাপকালে জোলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একমত হন যে রোহিঙ্গা সংকট তৈরি করেছে মিয়ানমার। এখন চার দশকের পুরোনো এ সমস্যা সমাধানের সময় এসেছে বলেও মত দেন জোলি।
রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে এবং এ বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য একজন বড় সেলিব্রেটি হিসেবে জোলিকে হলিউডে একটি অনুষ্ঠান করার পরামর্শ দিয়েছেন ড. মোমেন। সেই সাথে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুত অর্থ সাহায্য আদায়েও তাকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমার যে নানা শর্ত প্রয়োগ করছে তার সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, এসব মানুষ তাদের নাগরিক এবং আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিয়ানমার তাদের ফেরত নিক। এ বিষয়ে জোলি চেষ্টা করবেন বলে মন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সাথে আলাপকালে ড. মোমেন অভিযোগ করেন, মিয়ানমার এত বড় অপরাধ করলেও বড় দেশগুলো তাদের সাথে এখনও সব ধরনের সম্পর্ক রেখেছে। তাদের মাঝে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বজায় আছে। মিয়ানমারের অপরাধের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে কথা বলা ছাড়া বাস্তবে শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়ার নমুনা দেখা যায়নি।
মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইলেও মিয়ানমার এখনও সে পথে অগ্রসর হয়নি। দেশটির শুভবুদ্ধি হলে রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও সম্মানের সাথে নিজের দেশে ফিরে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
‘যত দ্রুত সম্ভব তাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে,’ যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের উচিত হবে রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে আসিয়ানের তত্ত্বাবধানে একটি সেফ জোন করার বিষয়ে রাজি হওয়া।