রবিবার বোমা হামলার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক খালিদুজ্জামান টিটুকে ছাত্রলীগের কেউ না বলে দাবি করেছিলেন।
তবে সোমবার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন তপু দাবি করেন, ‘পুলিশের হাতে আটক হওয়া দর্শনা সরকারি কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র টিটু ছাত্রলীগের কোনো সক্রিয় নেতা বা কর্মী নন। তবে তাকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত।’
আটক টিটু দামুড়হুদার দর্শনা ইসলাম বাজারের মৃত মোজাহিদ আলীর ছেলে।
দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সিরাজুল আলম ঝন্টু বলেন, ‘টিটুকে ছোটকাল থেকে চিনি ও জানি। সে ছাত্রলীগের কোনো পদে না থাকলেও সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করত। তার পরিবারও আওয়ামী পরিবার হিসেবে পরিচিত।’
‘টিটু পুলিশের এএসপির গাড়িতে বোমা হামলা চালাবে, এটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। ঘটনাটি আমাদের কাছে ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে। সঠিকভাবে তদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানাই,’ যোগ করেন তিনি।
টিটুর চাচা ফারুক হোসেনের দাবি, ‘টিটু ছোট থেকেই নম্র-ভদ্র। সে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা চালাবে এটা কোনোভাবেই আমরা মানতে পারছি না। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সে উথলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দেখতে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর পুলিশের হাতে তার আটক হওয়ার খবর পাই আমরা।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন বলেন, অপরাধীর কোনো রঙ ও বর্ণ থাকে না। সে কোন দলের, কোন মতের তা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় না। বোমা হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, গুলিবিদ্ধ টিটুকে পুলিশি প্রহরায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যদিও চিকিৎসকরা রবিবার রাতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আওলিয়ার রহমান বলেন, ‘গুলিতে টিটুর ডান পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাতেই ঢাকাতে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু সোমবারও তাকে ঢাকায় নেয়া হয়নি। সদর হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
রবিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার উথলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনাস্থান পরিদর্শন শেষে সদরে ফেরার পথে সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেলসহ চার কনস্টেবলকে বহনকারী গাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়।
আবু রাসেলের ভাষ্য, ‘রাত ৯টার দিকে জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দর্শনা ফিলিং স্টেশনের কাছে পৌঁছালে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন আমার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে মারেন। বোমাটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে গাড়ির ডান দিকের কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের ধাওয়া করলে তারা পালানোর চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে খালিদুজ্জামান টিটু নামে এক যুবক আটক হয়।’
রাতেই জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা চালিয়ে বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল হামলাকারীদের। তবে অল্পের জন্য পুলিশের সবাই প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।’