শাভিকে বরখাস্ত করার ব্যাপারটি ‘ডেকে এনে অপমান’ করার মতো মনে হতে পারে অনেকের কাছেই। বিষয়টি খোদ শাভিকেও যে ভালো অনুভূতি দেয়নি, বিদায় বেলায় তা-ই ঝরল তার কণ্ঠে।
রবিবার সেভিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে জিতে চলতি মৌসুমের দাঁড়ি টানে বার্সেলোনা। এর মাধ্যমে জয়ের হাসিতেই শেষ হয়েছে শাভির বার্সেলোনা ক্যারিয়ার। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তাই দলটির দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকে শুরু করে ক্লাবের ভবিষ্যৎসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাকে।
এ সময় নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে কোনো রাখঢাক রাখেননি বার্সার এ কিংবদন্তি খেলোয়াড়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই বার্সেলোনার দায়িত্ব নেওয়ার একেবারের শুরুতে ফিরে গেলেন তিনি। বিপর্যয় সামাল দিয়ে যেভাবে তিনি দলটিকে বর্তমান অবস্থানে তুলে এনেছেন, এর কোনো মূল্যায়নই তিনি পাননি বলে জানালেন।
‘আমার মনে হয় না, যে কাজগুলো আমরা করেছি, সেসবের যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়েছে, বিশেষ করে যে পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্ব নিয়েছিলাম।
‘আমরা যখন আসি, তখন (পয়েন্ট) টেবিলের ৯ নম্বরে ছিল বার্সা। সেখান থেকে আমরা রানার্স-আপ হয়ে লিগ শেষ করি। প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌসুম হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে (গত মৌসুমে) আমরা দুটি শিরোপা (লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ) জিতি।’
তবে এই মৌসুমে ক্লাবের প্রত্যাশা পূরণ না করতে পারার কথাও স্বীকার করেন তিনি। বলেন, ‘বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের সুক্ষ্ম কিছু বিষয় (ক্লাব কর্তৃপক্ষের) বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। অন্তত ৪টি ম্যাচে আমরা দারুণ খেলেও শেষটা ভালোভাবে করতে পারিনি। ‘যেভাবে সব হলো (বরখাস্ত), এটা খুবই বিব্রতকর। আমি হতাশ। তবে কোচদের জীবনই এমন।’
আরও পড়ুন: যে ৬ কারণে স্বপ্নযাত্রা থামল লেভারকুজেনের
জানুয়ারিতে যখন দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন, তারপর থেকে বেশ কয়েকবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, ক্লাবে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ পাননি তিনি। বিদায়লগ্নেও তার কণ্ঠে ঝরল একই অভিযোগ।
‘গত আড়াই বছরে আমরা যা করেছি, তাতে ভূমিকম্প হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি। নানা সময়ে আমাকে ‘টার্গেট’ বানানো হয়েছে। শান্তিতে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।
‘এক মাস আগেই আমাদের দাবি ছিল (ক্লাবে) স্থিতিশীলতা যেন থাকে। সেই প্রতিশ্রুতি পেয়েই আমরা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আরও কঠোর পরিশ্রম করতে আমরা মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু...’
সেধে সেধে রেখে দেওয়ার পরও এভাবে কেন ছাঁটাই করা হলো, তা শাভিরও অজানা। বলেন, ‘(বরখাস্ত করার) পেছনের কারণ বা উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব আমার নয়। ক্লাব সভাপতি তা করতে পারেন। আমার স্রেফ সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া এবং সম্মান জানানো ছাড়া উপায় নেই। তাদের কথার সঙ্গে আমি একমত কি না- এসবেরও কোনো মূল্য নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে, পেছন ফিরে তাকানোর আর উপায় নেই। সবার ওপরে ক্লাব।’
আরও পড়ুন: শাভি বরখাস্ত, বার্সার নতুন কোচ হচ্ছেন ফ্লিক
তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই থাকতে চেয়েছিলাম। তবে আমাকে একটি সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে এবং সেটিকে সম্মান করা উচিৎ বলে মনে করেছি। সিদ্ধান্তটি খুবই হতাশাজনক; খুব পরস্পরবিরোধী ও মিশ্র অনুভূতি হয়েছে।
‘এই মৌসুমে ট্রফি জিততে না পারলেও ইতিবাচক কাজের মধ্যেই ছিলাম আমরা। মনে হচ্ছিল, আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমার এখনও তা-ই মনে হয়।
‘তবে এখন এসব বলে লাভ নেই। সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তবে আমরা যা করেছি তাতে আমি খুশি, গর্বিত ও সন্তুষ্ট। ক্লাবের এমন কঠিন সময়ে এসে আড়াই বছরে দুটি ট্রফি জিতেছি- এটিই বাস্তবতা।’
বার্সার বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন যেকোনো কোচের জন্যই যে কাজটি আরও কঠিন হবে, তা আগেভাগেই জানিয়ে রাখলেন তিনি।
‘তাদের জেনে রাখা উচিত, (এখানকার) পরিস্থিতি খুবই কঠিন। কারণ, বার্সেলোনা এমনিতেই খুব কঠিন ক্লাব, তার ওপর এখন প্রতিকূল আর্থিক অবস্থার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল। ফলে তাদের কাজটা মোটেও সহজ হবে না, ভুগতে হবে।
‘তবে ধৈর্য রাখতে হবে। কেবল টানা জিততে পারলেই তারা নিরাপদ থাকতে পারবে। তারা আগে ক্লাবের অংশ ছিল কি না- এসবের কোনো মূল্য নেই।’
বার্সেলোনার কিংবদন্তি খেলোয়াড় হয়ে দলের কোচিংয়ে আসায় বিষয়টি শাভিকে আরও চাপে রেখেছিল বলেও জানালেন।
‘আমাকে সবসময় আতশ কাঁচের নিচে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটা পর্যায়ের প্রত্যাশা আমার কাছ থেকে সবসময়ই ছিল। কারণ সর্বকালের সেরা বার্সা দলে খেলেছি আমি। এটা মোটেও আমার পক্ষে যায়নি।’
আরও পড়ুন: আবেগী শাভির বিদায়বার্তা