শুকনো মৌসুমের ফসল তরমুজ বর্ষায় আবাদ করতে গিয়ে এর গাছগুলো মাচায় তুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মাচায় লাউ বা চালকুমড়ার মতো ঝুলছে অসময়ের তরমুজ। ওজন বেশি হওয়ায় নেটের ব্যাগ দিয়ে তরমুজ পেচিয়ে মাচার সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে। তীব্র রোদে ঘেরের পাড়ে তরমুজ খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষিরা। ফলন ভালো হওয়ায় এখন ঘামে ভেজা তাদের এ পরিশ্রম আনন্দে বন্যা নিয়ে এসেছে।
স্বাদ ভালো হওয়ায় অসময়ে হলেও বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। মাচায় ঝুলে থাকা তরমুজের মনোরম দৃশ্য দেখতে অনেকে এসব এলাকায় বেড়াতে আসছেন। সেই সাথে ক্ষেত থেকেই তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। বাজারে চাহিদা থাকায় জমি থেকেই তরমুজ কিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাইকারি ক্রেতারাও আসছেন।
উপজেলার নতুনদিয়া ও গোয়াড়া গ্রামের ২০ চাষির তরমুজ আবাদ ইতোমধ্যে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাদের সফলতা দেখে তরমুজ চাষে এ অঞ্চলের কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
রূপসা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে কৃষকরা যখন দিশেহারা তখন তাদেরকে তরমুজ আবাদের জন্য উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে রূপসা কৃষি বিভাগ। নতুন এ ফসলটি প্রথমে কৃষকরা তেমন আগ্রহ না দেখালেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্যোগে আগ্রহী কৃষকের তালিকা করা হয়। পরে উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে তরমুজের বীজ, জৈব সার, ফেরোমন ট্রাপ, স্টিকি ট্রাপ, বায়োডার্মা ও ইকোম্যাক এবং কৃষকদেরকে নিরাপদভাবে তরমুজ উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এভাবেই কৃষকদের উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে উপজেলার দুই গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে অসময়ের তরমুজ আবাদ করা হয়।
কৃষি বিভাগ জানায়, সবুজ ডোরাকাটা সুইট ড্রাগন, কালো রংয়ের ব্লাক ডায়মন্ড ও সুইট ড্রাগন পাকিজা সর্বোচ্চ ১৫ কেজি ওজন হতে পারে। এছাড়া সবুজ দাগ কাটা কানিয়া জাতের (ভেতরে হলুদ) তরমুজের ওজন ৩ থেকে ৪ কেজি হয়ে থাকে। এসব জাতের তরমুজের গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফলন আসে।
গোয়াড়া গ্রামের কৃষক দেবযানী মুখার্জী, চম্পা অধিকারী, চন্দ্রা বৈরাগী, বিবেচ্যু হীরা এবং নতুনদিয়া গ্রামের সবুজ বৈরাগী ও শুভ্র বৈরাগীর সাথে এই প্রতিনিধির কথা হলে তারা জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তরমুজের বীজসহ অন্যান্য উপকরণ পেয়েছেন। তরমুজ আবাদের জন্য এখন এলাকায় আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অসময়ের তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে ও বাজারে চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হলে রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, নতুনদিয়া ও গোয়াড়া গ্রামে প্রথমবারের মতো অফসিজনে তরমুজের আবাদ হয়েছে। আগামীতে ওই এলাকায় তরমুজের আবাদ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।