উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'রিমাল' রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সর্বশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রম করার পর এর নিম্নভাগ অতিক্রম করবে।
ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রিমাল: আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে বাগেরহাট উপকূলবাসী
৮ লক্ষাধিক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে
ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় সেখানকার ৮ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
একইসঙ্গে উপকূলীয় ১৬ জেলার অধিবাসীদের দেরি না করে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
রবিবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অনুরোধ জানান।
উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৮-১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় ১৬ জেলার মধ্যে রয়েছে- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের চেয়ে নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ভারী বৃষ্টিপাত
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ (৮৯ মিলিমিটার) দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নদীবন্দরকে চার নম্বর সংকেত দেখিয়ে বন্দর এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রিমাল: চট্টগ্রাম বন্দরে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে
পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমিধসের আশঙ্কা
অতি ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল
ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ পরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীনে থাকা দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
রবিবার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ ঘোষণা দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।