এক গবেষণায় দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট নয় দিনে সচিবালয় ও চারপাশের এলাকায় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের নিচে একবারও নামেনি। কখনও কখনও তা উঠেছে ১২৯ ডেসিবেলের বেশি।
‘নীরব এলাকা ঘোষিত সচিবালয়ের চারপাশে তীব্র শব্দ দূষণ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাটির ফলাফল তুলে ধরা হয়।
আরও: বায়ু দূষণ: ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ শব্দদূষণ বেড়েছে উল্লেখ করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্রতার ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ লক্ষ্য করা গেছে পল্টন বাসস্ট্যান্ডে (১২৯ দশমিক ২ ডেসিবেল) এবং সময়ের ব্যাপ্তিতে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ পাওয়া গেছে কদম ফোয়ারায়।
সংগৃহীত উপাত্তের গড় হিসেবে শব্দের সর্বোচ্চ মান ১১৮ দশমিক ৭ ডেসিবেল পাওয়া গেছে কদম ফোয়ারায় এবং সবার চেয়ে কম শব্দ রয়েছে সচিবালয়ের পশ্চিম দিকের (মসজিদ) স্থানে ৯৯ দশমিক ৫ ডেসিবেল।
গত ১৪ থেকে ২২ ডিসেম্বর- এ নয় দিনে সচিবালয় ও চারপাশের এলাকায় শব্দ পর্যবেক্ষণ করে ক্যাপসের ১০ সদস্যের একটি দল। এতে ১২ স্থানের সবগুলোর মধ্যেই সর্বোচ্চ শব্দের মান পাওয়া গেছে ১২০ ডেসিবেলের ওপরে।
এ সময় ১২ স্থানে দৈনিক তিন সময়ে সাউন্ড প্রেশার লেভেল (এসপিএল) মিটারে ১ হাজার ৮০০ শব্দের নমুনা নেয়া হয়। নমুনা বিশ্লেষণে গবেষকরা দেখেছেন যে ওই স্থানগুলোতে কখনোই শব্দের মান সর্বনিম্ন ৬০ ডেসিবেলের নিচে নামেনি।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকারী বাপার যুগ্ম সম্পাদক এবং ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় সর্বোচ্চ মানের দিক থেকে ২০২০ সালে সবকটি স্থানেই শব্দ দূষণ বেড়েছে, তবে শব্দের সর্বোচ্চ মানের ভিত্তিতে দূষণের স্থানভেদে ক্রম পরিবর্তন হয়েছে। দিনের ব্যবধানে, সকালের তুলনায় দুপুর এবং বিকালের সময়ে গড় শব্দের সর্বোচ্চ মান কিছু বেশি ছিল। ১২ স্থানের প্রতিটিতে দিনের বেলায় ১০০ ভাগ সময় নীরব এলাকার জন্য প্রযোজ্য মানমাত্রার (৫০ ডেসিবল) চেয়ে প্রায় ২ দশমিক ১ গুণ বেশি মাত্রার শব্দ ছিল।
আরও পড়ুন: ঢাকার বায়ু দূষণ কমাতে কঠোর লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি মন্ত্রীর
শীতে কোভিডের ঢেউ ঠেকাতে বায়ু দূষণ কমাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা
২০২০ সালে সামগ্রিকভাবে ১২ স্থানে ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ৭০ ডেসিবেলের (তীব্রতর) বেশি শব্দের মাত্রা ছিল যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
তিনি বলেন, যেহেতু করোনা পরিস্থিতে প্রায় ১০ শতাংশ যানবাহন কম ছিল (স্কুল, কলেজ ও অন্যান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়), তাই মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ শব্দের মাত্রা কমলেও প্রকৃত হিসেবে শব্দদূষণ না কমে বরং বেড়েছে।
জরিপ পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে হর্ন গণনার ফলাফল অনুযায়ী, জিরো পয়েন্ট এলাকায় সবচেয়ে বেশি হর্ন গণনা করা হয় যেখানে ১০ মিনিটে ৩৩২টি হর্ন বাজাতে দেখা যায়, যার মধ্যে ৭০টি হাইড্রোলিক হর্ন এবং ২৬২টি সাধারণ হর্ন বাজানো হয়।
ট্রাফিক পুলিশের ২০০ সদস্যের শ্রবণ স্বাস্থ্যের ওপর প্রশ্নপত্র জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্ব পালনরত ৯ দশমিক ৫ ভাগ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি হ্রাস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২৮ দশমিক ৬ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ জানান যে অন্যরা উচ্চস্বরে কথা না বললে তাদের কথা শুনতে কষ্ট হয়, ১৩ দশমিক ৭ ভাগ ট্রাফিক পুলিশের সাধারণভাবে মোবাইলে কথা শুনতে অসুবিধা বোধ করে।
শব্দদূষণ রোধে অধ্যাপক কামরুজ্জমান সচিবালয়ের ভেতর ও চারপাশে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানোর তাগিদ দেন। এছাড়া সচিবালয়ের দেয়ালে সাউন্ড প্রুফ প্লাস্টার বোর্ড বসানো যেতে পারে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে দেখতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বায়ু দূষণে ১.৮ বছর আয়ু কমছে বাংলাদেশিদের
তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে রাস্তায় সাইরেন বাজানোসহ ভিআইপি প্রটোকল না দিতে অনুরোধ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী বলেন, ‘শব্দদূষণের মতো মারাত্মক ঘাতক থেকে আপামর জনসাধারণকে রক্ষা করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকমণ্ডলী ও ছাত্র সমাজকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ ধরনের জাতীয় গণগুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল এ সময় বলেন, শব্দদূষণ একটি সামাজিক ব্যধি এবং রাষ্ট্রীয় সমস্যা। সর্বপ্রথম সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহার ও এর আমদানি নিষিদ্ধকরণের আইনটি দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান।