ইউএনবির সাথে এক সাক্ষাত্কারে এই মেগা সিটির বায়ু দূষণ কমাতে সরকারের এই পদক্ষেপের কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘সড়ক, বিল্ডিং ও মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ফলে সৃষ্ট বায়ু দূষণের মাত্রা কমাতে কিছু নির্দেশনাসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: শীতে কোভিডের ঢেউ ঠেকাতে বায়ু দূষণ কমাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা
শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকার দুই সিটি করপোরেশনকে নগরীর সড়কগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
ঢাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ইটভাটা, রাস্তা নির্মাণ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্যও বায়ু দূষণের জন্য দায়ী।
শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘অনেকগুলো বিল্ডিং রাস্তার পাশে নির্মাণ সামগ্রী রেখে তৈরি করা হচ্ছে যা ধুলাবালির অন্যতম প্রধান উত্স। উন্নত দেশগুলোতে, দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নির্মাণ কাজ করা হয়। একই নিয়ম বাংলাদেশে থাকলেও কেউ সেটি অনুসরণ করছে না।’
তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্মাণ সামগ্রী অর্থাৎ মাটি ও বালি পরিবহনের সময় এগুলোর একটি অংশ রাস্তার ফেলে যাচ্ছে যা পরবর্তীতে বায়ু দূষণের জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ, ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা ড্রেনের পাশে দীর্ঘদিন স্তুপিকরণের ফলেও বায়ু দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে।’
শাহাবুদ্দিন নগরীর বায়ু দূষণ রোধে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বায়ু দূষণ এড়াতে ছোট বড় প্রতিটি প্রকল্প কাজে পরিবেশ মেনে চলা উচিত। কাজগুলো এমনভাবে করতে হবে যাতে পরিবেশ দূষণ না হয় । আমরা বায়ু দূষণ রোধে শক্ত অবস্থানে আছি। কোথাও যাতে বায়ু দূষণ না হয় সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘বায়ু দূষণ রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে আমাদের জনবল কম। তারপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। বায়ু দূষণ রোধে অভিযান আরও বৃদ্ধি করা হবে,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন:বায়ুদূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে দেখতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বায়ু দূষণ: ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ
মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম দেশব্যাপী সম্প্রসারণ ও অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমানে অবস্থিত বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় ছাড়াও নতুনভাবে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়সহ ৪৩টি জেলায় জেলা অফিস স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর ও শিল্পঘন শহরে সার্বক্ষণিক বায়ুর গুণগতমান পরিমাপ করা হচ্ছে। এতে দেখা যায় শুস্ক মৌসুমে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে যায় ।
শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বেশির ভাগ বায়ু দূষণ হয় ঢাকার চারপাশে ইটভাটার জন্য। আইনের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে বিদ্যমান ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করতে কাজ শুরু করেছে।’
‘পরিকল্পনাটি সফল করতে সরকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণ কাজে ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে,’ বলেন তিনি।
২০২৫ সালের পর পর্যায়ক্রমে সকল বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ব্লক ইট ব্যবহার বাস্তবায়ন করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
ঢাকার বায়ু দূষণ
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণের সাথে লড়াই করে আসছে।
প্রায়শই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকে।
আরও পড়ুন:বায়ু দূষণে ১.৮ বছর আয়ু কমছে বাংলাদেশিদের
বায়ু দূষণে বছরে ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু: জাতিসংঘ মহাসচিব
ঢাকা মহানগরীর আশপাশে স্থানীয় ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, মেট্রোরেল প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের নির্মাণ কাজ, অযোগ্য যানবাহন থেকে আসা কালো ধোয়া দেশের বায়ু দূষণের প্রধান উত্স হিসেবে চিহ্নিত।
দেশে বায়ু দূষণের উৎস নিয়ে গত বছরের মার্চে একটি গবেষণা প্রকাশ করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্ব ব্যাংক। তাতে দেখা যায় যে বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণ কাজ।
বায়ু দূষণের প্রভাব
বায়ু দূষণ প্রকৃতি এবং মানুষের স্বাস্থ্য উভয়ের উপরই খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, অ্যালার্জি, হাঁপানির আক্রমণ, কনজাংটিভাইটিস, ব্রঙ্কিয়াল রোগ, ফুসফুস বা ত্বকের ক্যান্সার, দৃষ্টি সমস্যা, শিশুর মানসিক বিকাশে রক্তের সমস্যা, গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক মহিলারা বায়ু দূষণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে ।
কোভিড -১৯ এবং বায়ু দূষণ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এ বছরের শীতে দূষিত বায়ু করোনাভাইরাসকে মৃত্যুর হারের বিবেচনায় আরও মারাত্মক করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়েছে যে যেসব শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি রয়েছে তাদের মারাত্মক করোনা মহামারির বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে বায়ু দূষণের পাশাপাশি ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।