সংশ্লিষ্টরা জানান, মনিরামপুর উপজেলার চালুয়াহটি ও মশ্বিমনগর ইউনিয়নে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করা হয়েছে ৭৫০ বিঘা জমিতে। এই দুই ইউনিয়নের চাষিরা শিমের ফলন ও বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় বেশ খুশি। ফলে অন্য এলাকার চাষিরা বর্তমান গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
চালুয়াহাটি ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের চাষি জাকির হোসেন জানান, কয়েক বছর যাবৎ ধান চাষে লোকসান হওয়ায় চাষাবাদ প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শে জুন মাসে আউশ ধানের মৌসুমে শাহপুর মাঠে মোট ৪৮ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করেন।
তিনি জানান, জমিতে প্রথম তিনি ধইঞ্চা বীজ বপন করেন। এরপর ধইঞ্চা গাছ একটু বড় হলে গাছের গোড়ায় শিমের বীজ বপন করেন। মাসখানেক পর শিমের গাছ উঠিয়ে দেন ধইঞ্চা গাছে। পরবর্তীতে ধইঞ্চা গাছেই শিম গাছের পরিধি ছড়িয়ে পড়ে। আগস্ট মাসেই পুরো ৪৮ শতক জমিতে ধইঞ্চার ওপর শিম গাছের বিস্তৃতি ঘটে এবং তাতে ফুল আসে। আগস্টের শেষের দিকে শিম তুলে তিনি বিক্রি শুরু করেন। প্রথমদিকে তিনি প্রতি কেজি শিম পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ১৬০ টাকা হারে। এরপর প্রতি কেজি শিম বিক্রি করছেন ১১০ টাকা।
৪৮ শতক জমিতে বীজসহ সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খেত থেকে মোট ৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করার টার্গেট রয়েছে চাষি জাকির হোসেনের।
হাকিমপুর গ্রামের চাষি বাশারত হোসেন জানান, তিনি ৩৩ শতক জমিতে একই পন্থায় গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তিনি খেত থেকে এক থেকে দেড় মণ শিম তুলে এলাকার পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি ১১০-১৩০ টাকায় বিক্রি করেন।
তিনি জানান, ধান চাষের চেয়ে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে অধিক মুনাফা হচ্ছে। এ জন্য তিনি খুবই খুশি।
চাষি ওবায়দুর রহমান জানান, ধইঞ্চা গাছের কারণে অধিক খরচ করে মাচা তৈরি করা লাগে না। ৩৩ শতক জমিতে এক কেজি ধইঞ্চা বীজ বপন করলে চলে। এক কেজি বীজের মূল্য মাত্র ৬০ টাকা। এছাড়াও ধইঞ্চার পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার জমিতে পাতা পড়ে তা পচে জৈব সার হয়। অন্যদিকে মৌসুম শেষে ধইঞ্চা গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যে কারণে বর্তমান গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে এলাকার অধিকাংশ চাষির মাঝে আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
মশ্বিমনগর ও চালুয়াহাটি ব্লকের উপসহকরী কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান, ধইঞ্চা গাছের ওপর শিম চাষ লাভজনক। ফলে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, চলতি মৌসুমে ওই দুটি ইউনিয়নে ১১০ হেক্টর (৭৫০ বিঘা) জমিতে চাষিরা পরিবেশবান্ধব ধইঞ্চা গাছের ওপর গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেছেন। আর এ চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের মধ্যে বেশ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।