এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া উপলক্ষে ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এ কৃতিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের। সরকারে থেকে আমরা শুধু সুযোগ তৈরি করতে নীতিগত সহায়তা দিয়েছি। এটি জাতির জন্য ঐতিহাসিক ও গৌরবজ্জ্বল মুহূর্ত।’
তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এটির আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি এই কৃতিত্বের জন্য দেশে বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
‘মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই মহান নেতার হাতে প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার এই সুবর্ণ জয়ন্তী বছরে দেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এর কৃতিত্ব এদেশের জনগণকে দিয়ে বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ মাইলফলক অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে নিজে এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যুক্ত থাকতে পেরে এই অর্জনে আমি গর্বিত।
‘জাতিসংঘের (ইউএন) কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুর্বলতার ভিত্তিতে এলডিসি থেকে একটি দেশের উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে,’ তিনি বলেন।
২০১৮ সালে সিডিপির প্রথম ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা সভার পর থেকেই বাংলাদেশ এই মানদণ্ডের পরিপূর্ণতা অব্যাহত রাখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলডিসি তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ এই বছরও তিনটি মানদণ্ড পূরণ করেছে।
স্বপ্লোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে একটি দেশের মাথাপিছু আয় তিন বছর কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি, মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে মানদণ্ড ৩২ বা তার কম হতে হয়।
বাংলাদেশ তিনটি শর্তই পূরণ করে এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৫.২।
বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি এখন ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং রপ্তানি আয় ৪০.৫৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, বিদেশি রিজার্ভ ইতিমধ্যে ৪৪.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্য, মাছ, ডিম, মাংস এবং শাকসব্জী উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, বলেন তিনি।
এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়।
আরও পড়ুন: টিকা নেয়ার পর স্বাস্থ্য নির্দেশিকা ভুলে যাবেন না: প্রধানমন্ত্রী
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসায় এডিবি
বাংলাদেশেই যুদ্ধবিমান তৈরি হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৯ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে, প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়েও মানুষের মধ্যে ডিজিটাল পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আইসিটি সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে।
‘এই সমস্ত অর্জন বিবেচনা করে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের একটি পরিবর্তিত দেশ,’ তিনি বলেন।
করোনা মহামারি সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালটি কেবল বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সংকটপূর্ণ বছর ছিল।
তিনি অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ২৮, ৫০, ৯৪০ জন টিকা নিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। তবে এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করার উপর জোর দেন তিনি।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কথা বলেন তিনি। যার মধ্যে কিছু কিছু এ বছর এবং কিছু আগামী বছর উদ্বোধন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
গণভবন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গণভবনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জাতিসংঘের সুপারিশ হস্তান্তর করেন।