ঘুষ গ্রহণের মামলায় আট বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুদকের বরখাস্তকৃত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে জামিন দিয়ে তা একদিন পরেই প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার সকালে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আজ জামিন আদেশ প্রত্যাহারকালে আদালত এনামুল বাছিরের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরীকে উদ্দেশ করে বলেন, আইনজীবীদের কথা আমরা বিশ্বাস করি। এ কারণে আপনাদের কথার ওপর বিশ্বাস করে অনেক আদেশ দিয়ে থাকি। আপনি এনামুল বাছিরের আপিলের নথিতে জামিনের দরখাস্ত সংযুক্ত না করেই জামিন শুনানি করেছেন। এটা একটা অপরাধ। দ্বিতীয়ত, আপনি আদালতকে না জানিয়ে পরে জামিনের দরখাস্ত বেঞ্চ অফিসারের কাছে দিয়েছেন। এটা আরেকটা অপরাধ। এই পেশাগত অসদাচারণের জন্য আমরা আপনাকে বার কাউন্সিলে পাঠাতে পারতাম। কিন্তু তা করছি না। তবে খন্দকার এনামুল বাছিরের জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিচ্ছি।
আরও পড়ুন: ৮ বছরের দণ্ডিত দুদকের এনামুল বাছিরকে জামিন দিল হাইকোর্ট
আদালতে এনামুল বাছিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, এনামুল বাছিরের আইনজীবী জামিন আবেদন দাখিল না করেই শুনানি করেছেন। এজন্য আদালত জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার এনামুল বাছিরকে জামিন দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।
জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে করা মামলার রায় দেন। রায়ে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আরও পড়ুন: এনামুল বাছিরের সাজা কেন বাড়ানো হবে না, জানতে হাইকোর্টের রুল
এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে। তবে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উভয়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় এ ধারায় কাউকেই সাজা দেওয়া হয়নি।
বিচারিক আদালত থেকে দেওয়া এই সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল গত ১৩ এপ্রিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ৮০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছিলেন উচ্চ আদালত। বিচারাধীন ওই আপিলের সঙ্গে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন দাখিল করেননি। জামিনের আবেদন দাখিল না করেই গত মঙ্গলবার তার আইনজীবী শুনানি করেন। আদালত তাৎক্ষণিক বিষয়টি না বুঝতে পারলেও গতকাল বিকালেই বিষয়টি টের পান। সে অনুযায়ী এনামুল বাছিরের জামিন আবেদন ফের আজকের কার্যতালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী আজ ফের এনামুল বাছিরেরর বিষয়টি লিস্টে আসে। আদালত শুনানি করে তার জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে নেন এবং আবেদনটি আউট অব লিস্ট করেন।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
এরপর ৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে। অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকে এ মামলায়ও গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম বিচার শেষে এ মামলায় রায় দেন।