জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অ্যাডভোকেট বেলজিয়ামের রানী ম্যাথিল্ডে মঙ্গলবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।
এ সফরে রানী ম্যাথিল্ডের সঙ্গে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অন্যরা।
এসময় তিনি একটি শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা নারীদের সঙ্গে এক আলোচনায় অংশ নেন, বিভিন্ন নতুন প্রশিক্ষণ নেয়া নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কাজ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে যোগ দেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার।
আরও পড়ুন: জার্মানি ও বেলজিয়ামে বন্যায় ১২৫ জনের মৃত্যু, বহু নিখোঁজ
সোমবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিম রানী ম্যাথিল্ডকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ধারা স্থবির ও নিম্নমুখী হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মানুষের জীবন-যাপনের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় জানায়, এই সফর ‘এসডিজির বর্ধিত গুরুত্ব বোঝায় এবং বাংলাদেশের গতিশীলতা ও প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরে।’
দেশে তার সফরের প্রথম দিনে বেলজিয়ামের রানী নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা ‘ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড’- পরিদর্শন করেন।
কারখানার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মচারী নারী। তারা বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রামের মাধ্যমে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪৭টি ব্র্যান্ড এবং নিয়োগকর্তা সমিতির সঙ্গে মিলে বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম ৪৫০টি কারখানাকে সমর্থন করে এবং বাংলাদেশের ১ দশমিক ২৫ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিককে উপকৃত করেছে।
এই উদ্যোগটি লিঙ্গ সমতা অর্জন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচার এবং সবার জন্য উপযুক্ত কাজ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বেলজিয়ামের রানী ম্যাথিল্ডে: টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ
বেলজিয়ামের রানী কারখানায় কর্মরত কিছু নারীর সঙ্গে দেখা করেন এবং চাইল্ডকেয়ারগুলো পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশের জন্য আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পাউটিয়ানেন বলেছেন, ‘আমি আনন্দিত যে বেলজিয়ামের রানী বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় কাজ এবং এসডিজির পক্ষে কথা বলার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। যা দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশসহ বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে এসডিজির অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।’
এরপরে, তিনি ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় একটি অ্যাবিলিটি বেইজড অ্যাক্সিলারেটেড লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন। যেখানে তিনি কোভিড-১৯ মহামারি কীভাবে তাদের জীবন ও শিক্ষাকে ব্যাহত করেছে সে বিষয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন।
মানসম্পন্ন শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুসারে, ইউনিসেফ-সমর্থিত শিক্ষাকেন্দ্র এবং ক্যাচ-আপ প্রোগ্রাম স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা ৭-১৪ বছর বয়সী ৮০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিশুকে শিক্ষা প্রদান করে।
রানী ম্যাথিল্ডে ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
তিনি নিখোঁজ ও যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুদের জন্য গঠিত প্রতিষ্ঠান ‘চাইল্ড ফোকাস ফাউন্ডেশন’ ও ইউনিসেফ বেলজিয়াম উভয়েরই সম্মানসূচক সভাপতি।
অসহায় মানুষদের জন্য তিনি ২০০১ সালে ‘প্রিন্সেস ম্যাথিল্ডে ফান্ড’ (বর্তমানে রানী ম্যাথিল্ড ফান্ড) প্রতিষ্ঠা করেন। এসডিজির অ্যাডভোকেট হিসেবে তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।
আরও পড়ুন: বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার আহ্বান