পশ্চিম জার্মানি ও বেলজিয়ামের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ১২৫ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। আরও বহু নিখোঁজ রয়েছেন। দেশ দুটোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শুক্রবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জার্মানির রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট রাজ্যের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিনজিগ শহরে বন্যায় প্রতিবন্ধীদের আশ্রয়কেন্দ্রের ১২ জনসহ ৬০ জন মারা গেছেন। আকস্মিক নিকটবর্তী আহর নদীর পানি ঢুকে গেছে শহরের বাড়িগুলোতে।
প্রতিবেশী রাজ্য উত্তর রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখানে বন্যায় ৪৩ জন মারা গেছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও তাঁরা সতর্ক করেছেন।
জার্মানির উত্তর রাইন-ওয়েস্টফালিয়া ও রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেইট রাজ্যের অনেক শহর ও গ্রাম বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখানকার অনেক বাসিন্দা ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। গভর্নর আর্মিন লাশেট শুক্রবার জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন।
আরও পড়ুন: জার্মানিতে ভয়াবহ বন্যায় নিহত ১৯, নিখোঁজ অসংখ্য
জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, বন্যার ধ্বংসযজ্ঞে তিনি ‘হতবাক’ হয়েছেন। তিনি নিহতদের পরিবার এবং শহরগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্টাইনমায়ার শুক্রবার বিকেলে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এখন সময় একসঙ্গে কাজ করার। বন্যা যাদের সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রতি সংহতি জানানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
কোলোনের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি শহরে বাড়িগুলোতে আটকাপড়া লোকদের সাহায্য করতে শুক্রবার উদ্ধারকর্মীরা ছুটে যান। আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হঠাৎ পানি ঢুকে পড়লে বাড়িগুলো ধসে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন মারা যান।
কাউন্টির প্রশাসক ফ্র্যাঙ্ক রক বলেছেন, ‘আমরা গতরাতে ৫০ জনকে বাড়ি থেকে বের করতে পেরেছি । আমরা ১৫ জনের কথা জানি যাদের এখনই উদ্ধার করা দরকার।’
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যু ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ছাড়াল
জার্মান ব্রডকাস্টার এন-টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রক বলেন, এই বন্যায় কতজন মারা গেছে কর্তৃপক্ষের কাছে এখনো তার সঠিক কোন হিসাব নেই। এই পরিস্থিতিতে কিছু লোক নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেনি। তাঁরা আটকা পড়ে আছে।
কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বলেছে, জার্মানিতে প্রায় ১,৩০০ মানুষ নিখোঁজ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট ও ফোন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কারণে বন্যাকবলিতদের কাছে পৌঁছাতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
জার্মানির পর বিধ্বংসী বন্যার ছোবলে বেলজিয়ামের অনেক ঘরবাড়ি খরস্রোতা নদীতে ভেসে গেছে এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বেলজিয়ামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেলিস ভারলিন্ডেন শুক্রবার ভিআরটি নেটওয়ার্ককে বলেছেন, এখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে কর্মকতারা নিশ্চিত করেছেন। নিখোঁজের সংখ্যা কমপক্ষে ১৯ জন।
আরও পড়ুন: ভারতে বজ্রপাতে নিহত ৬০
ভারলিন্ডেন বলেছেন, বেলজিয়াম থেকে নেদারল্যান্ডসে প্রবাহিত মিউস নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে বেশ কয়েকটি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় দক্ষিণাঞ্চলীয় ডাচ শহর ভেনলো থেকে প্রায় ২০০ রোগীকে সরিয়ে নিয়েছে।
চলতি সপ্তাহে পশ্চিম ইউরোপে বেশ কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণের পর এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেক বাড়িঘর-রাস্তাঘাট ধসে পড়েছে। অনেক গাড়ি ভেসে গেছে।