স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে ‘লস ও ড্যামেজ’ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এই কপ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত আসবেও না। পরবর্তী কপ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল ও পরিবেশ বিশেজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্য মির্জা শওকত আলী ইউএনবিকে বলেন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এই কপ সম্মেলনে এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে না। পরবর্তী কপে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
শওকত বলেন, বাংলাদেশসহ যে সকল দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার ফসল প্যারিস চুক্তিতে লস অ্যান্ড ড্যামেজ এর স্বতন্ত্র অন্তর্ভুক্তি। উন্নত দেশগুলো যদিও খুব বেশি স্বদিচ্ছায় লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্বে থাকায় এই ক্ষেত্রে জোরদার ভূমিকা নিতে পারে।
তিনি বলেন,আজকে আর্টিকেল ৬ নিয়ে আলোচনা চলছে ট্যাকনিকেল পর্যায়ে। কার্বন নিঃসরণে নতুন ম্যাকানিজম শুরু হয়েছ। দীর্ঘ মেয়াদী তহবিল ও ১০০ বিলিয়ন নিয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। এডাপটেশন নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদী তহবিল কীভাবে শুরু হবে সেটিও চূড়ান্ত হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু তহবিল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ
জলবায়ু সম্মেলন বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিকুর রহমান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে কম; অতীতে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণের দায়ভারও উন্নত দেশগুলোর। অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে সাইক্লোন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, নদী ও পাহাড় ভাঙন অনেক বেড়ে গেছে। এখন প্রতি বছরই ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাব থেকে বাঁচা যাবে।
তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে লবাণাক্ত তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্র উচ্চতা বেড়ে গেছে। গোপালগঞ্জে লবণাক্ত পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, দুর্যোগে ও জলবায়ু পরিবর্তনের পেক্ষাপটে স্থানচ্যুতি ও দেশান্তর বাংলাদেশে একটা প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিবাসন, স্থানচ্যুতির ইস্যুগুলোকে বিভিন্ন প্লাটফর্ম বা নেগোসিয়েশনের টেবিলে জোর আলোচনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতায় আঘাত আনতে পারে। সেজন্য আমাদের মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন সহজে চলে যাবে না, বাড়তেই থাকবে। এখান থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে এবং অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে। এ সব বিষয়ে আমরা বিভিন্ন পলিসিতে আমরা আমাদের কথা তুলে ধরছি। এলডিসি থেকে আমরা বের হওয়ার কথা কিন্তু আমরা বের হতে পারছি না। ২০২৬ সাল লাগবে বের হতে। আমরা কীভাবে এলডিসি থেকে বের হব তার পথ বের করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও এলডিসি গ্রুপের সমন্বয়ক জিয়াউল হক ইউএনবিকে বলেছেন, অনেক বিষয়ে পজেটিভ থাকলেও লস অ্যান্ড ডেমেজ বিষয়ে আলোচনা ধীর গতির।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক নিয়ে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ২০২০ সালে থেকে ১০০ বিলিয়ন দেয়ার কথা ছিল উন্নত দেশগুলোর। ২০ সাল শেষ। এখন ২০২১ সালও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যেই যেন ১০০ বিলিয়ন দেয়া শুরু করে সেটি আলোচনা হচ্ছে ট্যাকনিকাল পর্যায়ে। ইতিমধ্যে আলোচনায় ১০০ বিলিয়নের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন প্রস্তুত প্রায়। ১০০ বিলিয়ন ডলার ২০২০, ২০২১, ২০২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ সালের পর্যন্ত দিবে। এই বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মন্ত্রী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে ডলার দেয়া শুরু হবে হয়তো ২০২২ সালে।
তিনি আরও বলেন, তারপর আবার ২০২৫ সাল থেকে নতুন করে শুরু হবে। সেটি হতে পারে ১৫০ থেকে ৩০০ বিলিয়ন। তবে এটি ঠিক হয়নি। যত বেশি হবে সেটিই আলোচনায় থাকবে।
তিনি বলেন, নীতিগভাবে অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো আপত্তিও জানায়নি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা দিতে একমত না অনেক দেশের নেতারা। তবে এতো দিন আলোচনার পর এবার এজেন্ডাতে যুক্ত করা হয়েছে। যে টাকা দেয়ার জন্য আশ্বাস দেয়া হচ্ছে তার জন্যও দেয়া হচ্ছে নানা শর্ত।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় কমটির সভাপতি সাহের হোসেন চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, আলোচনা ইতিবাচকভাবে চলছে। আশা করছি এবার অগ্রগতি হবে। এবারও আলোচনায় ছিল ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল নিশ্চিত হবে কি না। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস উঠে আসে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের আলোচনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা দিতে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া