অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান ইউএনবিকে জানিয়েছেন, তার বাবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসকরা আমার বাবার নমুনা পরীক্ষা করেছেন এবং বৃহস্পতিবার রাতে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।’
শুক্রবার বাংলা একাডেমি চত্বর এবং অন্যান্য স্থানে তার বাবার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে আনন্দ বলেন, ‘শুক্রবার সকালে লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সরকারের দাফনের নিয়ম অনুসারে তাকে আমার দাদার কবরের পাশে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।’
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান (৮৩) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
এর আগে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পর গত ১০ মে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে ইউনিভার্সাল কার্ডিয়াক হাসপাতাল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।
বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় গত ২৯ এপ্রিল ড. আনিসুজ্জামানকে ইউনিভার্সাল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ২ মে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।
ড. আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ড. আনিসুজ্জামান বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
রাষ্ট্রপতি বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শিক্ষা ক্ষেত্রে আনিসুজ্জামানের অনন্য অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মতো বিদগ্ধ ও জ্ঞানী মানুষের মৃত্যুতে দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ছিলাম স্যারের (অধ্যাপক আনিসুজ্জামান) টিউটোরিয়াল গ্রুপের শিক্ষার্থী।’
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা ড. আনিসুজ্জামান ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি।
শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রদত্ত সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করা হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।
এছাড়া তিনি ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুইবার আনন্দবাজার পত্রিকার দেয়া আনন্দ পুরস্কার, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন।
২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
আনিসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪), মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯), মুনীর চৌধুরী (১৯৭৫), স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬), আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৮৩), পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪), মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯৮৮), আমার একাত্তর (১৯৯৭), মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮), এবং আমার চোখে (১৯৯৯)।