মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ‘বাধাগ্রস্ত করতে পারে’ এমন যে কারোর ক্ষেত্রে তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি প্রয়োগ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো। এ ছাড়া জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিতে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়াও এর মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা তাদের মতামত প্রকাশ করতে বাধা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
সাংবাদিকরাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে ব্রায়ান শিলার ইউএনবিকে এসব কথা বলেন।
দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, কারো উপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হবে কি না- তা নির্ধারণের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্নকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি ঘটনার বিস্তৃত, পুঙ্খানুপঙ্খু পর্যালোচনার উপর নির্ভর করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাংলাদেশের ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের নাম বা সংখ্যা প্রকাশ করবে না।
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার ইউএনবিকে এর আগে বলেছিলেন, ‘মার্কিন আইনে ভিসাসংক্রান্ত তথ্যগুলো গোপনীয়।’
তবে তিনি বলেন, মার্কিন সরকার এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে ঘটনাগুলো খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করেছে।
ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘প্রমাণগুলো যত্ন সহকারে পর্যালোচনা করার পরে আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনীতিকদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
আরও পড়ুন: গণমাধ্যম কর্মীরাও ভিসা নীতির মুখোমুখি হতে পারে: হাস
এই বছরের মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যকে সমর্থন করতে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা ২১২(এ)(৩)(সি) (‘থ্রিসি’) এর অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন।
এই নীতির অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালের ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
শুক্রবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলন এটি।’
তিনি বলেন, এই তালিকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে।
মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।’
ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর অনুসারে, ভবিষ্যতে যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকবে তারাও এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
মিলার বলেন, এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভিসা নিষেধাজ্ঞায় 'হারানোর কিছু নেই': শাহরিয়ার আলম
প্রথম দফায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপে পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র