সুন্দরবনের খালে গোসল করতে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে বেঁচে গেলেন কলেজ পড়ুয়া এক যুবক। সম্প্রতি সুন্দরবনের ঢাংমারী খালে গোসল করতে নামলে একটি কুমির আক্রমণ করে ওই যুবককে।
ওই যুবকের নাম রাজু হাওলাদার (২৪)। তিনি খুলনার দাকোপ উপজেলার পূর্ব ঢাংমারী এলাকার খ্রিষ্টান পাড়ার বাসিন্দা নজির হাওলাদারের ছেলে।
কুমিরের আক্রমণ থেকে ফিরে এসে লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে তিনি নিজ বাড়ি লাগোয়া সুন্দরবনের ঢাংমারী খালে গোসল করতে নামেন। এক পর্যায়ে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে মাথায় শ্যাম্পু মাখছিলেন তিনি। এই সময় হঠাৎ করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি কুমির তাকে আক্রমণ করে। কুমিরটি রাজুর ডান পায়ের হাঁটুর ওপরের দিকে কামড়ে ধরে প্রায় ১৫-১৬ হাত পানির গভীরে টেনে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কুমিরের চোখে ঘুষি মেরে প্রাণে বাঁচল কিশোর
রাজু কুমিরটির সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার একপর্যায়ে কুমিরের চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। কুমিরের চোখে আঘাত করলে কুমিরটি রাজুর পায়ের কামড় ছেড়ে দেয়। তখন রাজু দ্রুত উপড়ে উঠে আসে। তখন তিনি দ্রুত নদী থেকে উঠে মা-বাবা বলে চিৎকার করেন। তাৎক্ষণিক তার মা-বাবা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
কুমিরের কামড়ে রাজুর পায়ের ক্ষত জায়গায় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।
রাজুর বাবা নজরুল হাওলাদার, মা মরিয়ম বেগম এবং বড় ভাই মনির হাওলাদার ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে জানান, তারাসহ গ্রামের অধিকাংশ লোকজন ঢাংমারী খালে নেমে মাছ ধরা ও গোছলসহ বিভিন্ন কাজে করে থাকেন। কিন্তু কুমির কখনও কাউকে আক্রমণ করেনি। তবে হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাজুকে এভাবে আক্রমণ করবে এটা কেউ ভাবতে পারেননি।
তবে তারা রাজু বেঁচে ফেরায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও তার চিকিৎসার অর্থ যোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাড়ির একটি ছাগল বিক্রি করে তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু বন বিভাগের পক্ষ থেকে বা কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের সহায়তায় এগেয়ি আসেনি।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সুন্দরবনে ৩টি কুমির অবমুক্ত
এ বিষয়ে দরিদ্র এ পরিবারের পক্ষে সহায়তার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা মো. সাইফুল বারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঢাংমারী খালে প্রায় সময়ই বড় বড় দুইটি কুমির দেখা যায়। তাই বনবিভাগের পক্ষ থেকে খালের পাড়ের আশপাশের মানুষদের খালে নামতে প্রতিনিয়ত নিষেধ করা হচ্ছে। তারপরও তারা তা না শুনে খালে গোসল ও মাছ ধরতে নামেন। ফলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।