জেনে-বুঝে প্রার্থীদের সতর্কভাবে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার জন্য আবেদনের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন।
তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনে স্বাস্থ্যখাতে কর্মী সংকট রয়েছে। কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার ক্ষেত্রে কারা আবেদন করতে পারবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ব্রিটিশ হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে রয়েছে। এজন্য জেনে বুঝে এ ভিসার জন্য আবেদন করা প্রয়োজন। কোনো এজেন্সি যাতে এ ভিসা নিয়ে প্রতারণা করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে প্রার্থীকেই।’
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সিলেট স্টেশন ক্লাব লিমিটেডে সিলেটের বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।
প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় সভায় হাইকমিশনার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং ব্রিটেন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে দু‘দেশের সরকারি ও বেসরকারি তরফে গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে চলমান সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: ব্রিটিশ হাইকমিশনার
হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিলেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ব্রিটিশ বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, যার ৯০ ভাগেরই আদি নিবাস সিলেট। সিলেট-ই বাংলাদেশের একমাত্র শহর যার সাথে আকাশ পথে সরাসরি ব্রিটেনের যোগাযোগ রয়েছে।’
দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের অবদানের কথা উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রবাসীরা অনেক পরিশ্রম করেন। সেখানকার খাদ্য সেক্টরে তাদের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রেও বিপুল সাফল্য অর্জন করছে।
বাংলাদেশিদের সাফল্যের বর্ণনা দিতে দিয়ে তিনি ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সে চারজন বাংলাদেশি এমপি’র প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষাদান পদ্ধতি বিশ্বমানের। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।
রবার্ট ডিকসন বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। এই ৫০ বছরে ব্রিটেন ও বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। দুই দেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কে জড়িয়ে আছে, যা দিনে দিনে আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশত বর্ষপূর্তি এবং ব্রিটেন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীকে স্মরণীয় করতে ‘বৃট-বাংলা বন্ধন’নামে বছরব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ৮ শতাংশ। পরিবার পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিশু মৃত্যুরোধ, পুষ্টিখাতসহ সকল খাতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। ২০২৬ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশের এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
তিনি জানান, ব্রিটেনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল আছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের তৃতীয় বৃহৎ বাজার হচ্ছে ব্রিটেন। ব্রিটেনের ভোক্তারা এর সুবিধা ভোগ করছেন। ব্রিটেনও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী এবং তৃতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ কর পরিশোধকারী।
আরও পড়ুন: এটি বাংলাদেশের জন্য বড় এক বছর: ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডিকসন
রোহিঙ্গা ইস্যুকে ‘একটি ট্রাজিক ইস্যু’ উল্লেখ করে হাইকশিনার বলেন, তাদেরকে নিরাপদে, সম্মানজনক উপায়ে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।
১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থান দেয়া বাংলাদেশের একটি বিশাল উদারতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে বিশ্ব জনমত গঠনে তারা কাজ করছেন। বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পর্যন্ত গড়িয়েছে।’
হাইকমিশনার বলেন, আর্ন্তজাতিক অঙ্গণে এই সমস্যা সমাধানের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করা গেলে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।
সভায় ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাই কমিশনের গর্ভানেন্স পলিটিক্যাল টিমের প্রধান টম বুর্গ, প্রেস এন্ড কমিউনিকেশন্স অফিসার নারায়ন দেবনাথ, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড পার্টনারশীপ অফিসার আহসান সাজিদ, সিলেট কনস্যুলেট অফিসার রাহিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর: ব্রিট বাংলা বন্ধনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা