ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে করা চার মামলায় ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে মামলাগুলো এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আপিল বিভাগ তার জামিন বাতিল আবেদনের শুনানিকালে বলেন, ‘অর্থ পাচারকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই’। একইসঙ্গে ‘এ ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে’ বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। অন্যদিকে জয় গোপালের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির। পরে খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, অর্থপাচার মামলা নিয়ে আপিল বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আদালত বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় অর্থপাচার একটি বিশেষ ধরনের অপরাধ। এ অপরাধে দায়ের করা মামলা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের এ পর্যবেক্ষণ অর্থপাচার মামলার অন্যান্য আসামিদের জামিন শুনানির সময় আমরা হাইকোর্টে উপস্থাপন করব। ডিএজি আমিন উদ্দিন মানিক জানান, জয়গোপাল সরকারের চার মামলায় চেম্বার জজের স্টে অর্ডার আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। ফলে তাকে জেলেই থাকতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিমের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
এর আগে গত ১৮ আগস্ট জয় গোপাল সরকারকে পৃথক চার মামলায় জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। পরে জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ যার ওপর শুনানি শেষে গতকাল আদেশ দেয়া হয়।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়ায় এনু-রুপনের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। তাদের বাসায় টয়লেটে স্বর্ণের কমোড পাওয়া যায়। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়। এরপর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনুর বন্ধু হারুন অর রশিদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি এনু ও রুপনকে গ্রেপ্তারের পর তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে জয় গোপাল সরকারের নাম উঠে আসায় তাকে গতবছরের ১৪ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে ২০১৯ সালে গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানায় করা পৃথক চার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গেন্ডারিয়া থানায় ২০১৯ সালের ২৫ মে একটি, সূত্রাপুর থানায় ২৬ সেপ্টেম্বর দুটি এবং ওয়ারী থানায় ২৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করা হয়। গত বছরের ২২ জুলাই এসব মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। গেন্ডারিয়া থানার মামলায় ১৬ জন, সূত্রাপুরের দুটি মামলায় ১৫ ও ১০ জন করে এবং ওয়ারী থানার মামলায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, জয় গোপাল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন ফুটবলার ছিলেন। অবসরে গিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, পরে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক হয়ে এনু-রুপনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন।
আরও পড়ুন:ক্যাসিনো ‘মাফিয়া’ এনু-রুপনের জামিন আবেদন খারিজ
আজীজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় বিপুল পরিমাণ মদ ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম