ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাসেল সিকদার বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ইউএনবিকে জানান, ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে ৬৭টি লাশ উদ্ধার করেছে।
ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সেলিম রেজাও জানিয়েছেন, ৬৭টি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভবনগুলো থেকে ৭০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সেই সাথে আহতের মধ্যে ১১ জন ঢামেক হাসপাতালে মারা গেছেন বলে রাসেল সিকদার বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে ইউএনবিকে জানান।
মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে যখন আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি তখন ৪১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৯টি ইউনিট।
এছাড়া, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করতে এবং ওই এলাকার আবহাওয়া ঠাণ্ডা রাখতে বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার থেকে পানি ও রাসায়নিক দ্রব্য ছিটানো হয়।
রাসেল সিকদার জানান, উদ্ধার অভিযান বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের আরেক কর্মকর্তা মাহফুজ রিভান জানান, সব লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, আগুনে দগ্ধদের মধ্যে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ২১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত এবং রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের মধ্যে ৩৮ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
সেলিম রেজা বলেন, তারা ক্রমান্বয়ে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করছেন। লাশ দাফনের জন্য সরকার ২০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, তদন্তের পর অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বুধবার রাতে জানান, রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে চুরিহাট্টা এলাকায় একটি চারতলা ভবনের নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে তা মুহূর্তেই পাশের চারটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তর সূত্র জানায়, তাদের ৩৭টি ইউনিট রাত ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
যোগাযোগ করা হলে ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দীলিপ কুমার সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে ইউএনবিকে বলেন, রাত ২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও অন্য ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ায় তা পুরোপুরি নেভাতে সময় লেগেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ইউএনবি কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চকবাজার এলাকায় ‘ওয়াহেদ ম্যানসন’ নামে একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবনটিতে একটি মার্কেট ও একটি রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম ছিল।
স্থানীয়রা জানায়, ওই ভবনটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রায় ৪০ পরিবারের ৮০ জন সদস্য বসবাস করতেন।
পরে আগুন পাশের একটি ছয়তলা ভবন, একটি রেস্টুরেন্ট, একটি কমিউনিটি সেন্টার ও আরেকটি ভবনে দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।