চট্টগ্রাম মহানগরী ও ১৫ উপজেলায় সম্প্রতি ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এরমধ্যে জেলার বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।
জেলার ১৫ উপজেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৬৪ জন নারী-পুরুষ-শিশু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
তন্মধ্যে বোয়ালখালীতে আক্রান্ত ৫০ জন, চন্দনাইশে ৩৩ জন, পটিয়ায় ৩২ জন ও আনোয়ারায় ২৯ জন।
বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত দুসপ্তাহের ব্যবধানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সহস্রাধিক রোগী।
তবে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় ২৪০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের হাসপাতালে ১০ শয্যার বিপরীতে ১৩৫ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি
ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে সময়োপযোগী উদ্যোগসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলাসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের কারণ অনুসন্ধান করে ডায়রিয়া আউট ব্রেক ইনভেস্টিগেশন প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস।
প্রতি ইউনিয়নে একটি ও প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি করে মেডিকেল টিম পুনর্গঠন করে প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এ লক্ষ্যে একটি কন্ট্রোল রুম (ফোন নাম্বারে ০২৩৩৩৩৫৪৮৪৩) খোলা হয়েছে।
ডায়রিয়া বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরমের পাশাপাশি খাবারের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ডায়রিয়ায় ভুগছেন রোগীরা। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছে, তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংকট থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে ডায়রিয়া মোকাবিলায় ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। মজুত রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রীও। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসাবাড়িতে।
আরও পড়ুন: উলিপুরে ডায়রিয়ায় কিশোরের মৃত্যু
এদিকে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। অতিরিক্ত গরমেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে হঠাৎ করে উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি বেড়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিম এবং চিকিৎসা সামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে মানুষ জুস, পানি এবং বিভিন্ন খাবার খাওয়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে তরমুজের মৌসুম। তরমুজ কাটার পর ফ্রিজে রাখার ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। যা মানুষের শরীরে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিআইটিআইডি হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন অর্ধশত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে সেখানে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অনেকের অবস্থা খারাপ। তাদের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।
ডায়রিয়া আক্রান্ত মা কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, আমার মা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ খাওয়াই বোয়ালখালী উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর এখন স্যালাইন দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। তার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধ দেন। বর্তমানে তার অবস্থা উন্নতির দিকে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ভর্তি বেড়েছে। কিছুদিন যাবত এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে রোগীর চিকিৎসায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা শেষে সিলেটে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে