চট্টগ্রামে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আরও চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে এই সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
চারজনের মধ্যে জব্দ তালিকার দু’জন এবং সিআইডি’র ব্যালাস্টিক এক্সপার্টও রয়েছে। এর আগে এই মামলায় ১৪ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, মিতু হত্যা মামলায় চার জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এনিয়ে মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
আজকে কোনো সাক্ষীর জেরা হয়নি। এর মধ্যে সেসময় সিআইডি চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট), ফলের দোকানদার, পুলিশ কনস্টেবল ও মিতুর একই ভবনের বাসিন্দা আছেন। আগামী ১৬ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে জিইসি মোড়ের একটি ফল দোকানের কর্মচারি আবদুর রহিম জানান, ঘটনার দিন সকালে দোকান খুলতে গেলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও জড়ো হওয়া লোকজন দেখতে পান তিনি। তারা জানায়, এখানে একজনকে সন্ত্রাসীরা মেরে চলে গেছে। সেখান থেকে পুলিশ তিনটি গুলি, একটি গুলির খোসা ও এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করে জব্দ তালিকা করে। আমাকে স্বাক্ষর করতে বলায় আমি স্বাক্ষর করি।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যাকাণ্ড: ৭ বছর পর আসামি গ্রেপ্তার
মিতুর একই ভবনের বাসিন্দা উম্মে ফরহাদ আহমেদ সুরমা আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে জানান, আমার দুই ছেলেও ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে পড়ে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে আমার স্বামী ফোন করে আমাকে জানায়, মিতু ভাবি মারা গেছে। আমি লিফট থেকে নেমে দেখি মাহির। ও আমাকে বলে, আমার আম্মু মারা গেছে। সে তখন কান্না করছিল। তাকে ভবনের ভিতরে পাঠিয়ে আমি ওয়েল ফুডের সামনে যাই। দেখি মিতু ভাবি রাস্তায় পড়ে ছিলেন রক্তাক্ত অবস্থায়। গুলির চিহ্ন দেখি। এরপর পুলিশ সুরতহাল করে। আমি স্বাক্ষর করি।
সে সময়ের পাঁচলাইশ থানার কনস্টেবল রনিতা বড়ুয়া আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে জানান, ঘটনার দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া ফোন করে বলে যে জিইসি মোড়ে একটা লাশ আছে। ওখানে যেতে। আরও দুজন পুলিশ সদস্যসহ সেখানে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি ওয়েল ফুডের সামে কালো বোরকা পরা একটি লাশ পড়ে আছে। এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া সুরতহাল করেন। তাকে সহযোগিতা করি। তিনি জব্দ তালিকাও করেন।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সেসময় সিআইডি চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক ব্যালাস্টিক এক্সপার্ট আবদুর রহিম জানান, ২০১৬ সালের ৩০ জুন সিএমপি ডিবি’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কাছ থেকে পাওয়া স্মারক মূলে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি কাগজের বাক্সের ভিতর সিলগালা অবস্থায় আলামত পাই। আলামত হিসেবে ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তলের দুটি অব্যবহৃত, একটি ব্যবহৃত ও একটি মিস ফায়ার হওয়া কাতুর্জ, স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি পয়েন্ট ৩২ ক্যালিবারের রিভলবার, স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি রিভলবার পাওয়ার কথা আদালতে জানা। এসব আলামতের বিষয়ে মতামত, ব্যালাস্টিক রিপোর্ট ও রাসায়নিক প্রতিবেদন তিনি পরীক্ষা শেষে জমা দেন বলে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন।
পিবিআই’র তদন্তে বেরিয়ে আসে, মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ অভিযোগে ২০১২ সালের ১২ মে বাবুলের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচ থানায় মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই এ মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যা মামলায় বাদী মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন