শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির থাকায় গ্রাহকরা আশা করেন এ দুই দিন অন্তত তারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবেন। তবে শুক্রবার বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতোই বারবার লোডশেডিংয়ে রাজধানীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ৪ অক্টোবর টানা ৭ ঘন্টা জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পর সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার হলেও, এখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন আগের স্তরে পৌঁছাতে পারেনি।
কর্মকর্তাদের মতে, ঢাকা শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুক্র ও শনিবার ২৫০০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং এখন তাদের দিনে তিন ঘন্টারও বেশি সময় ধরে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তবে ডেসকো ও ডিপিডিসি উভয় এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারা দিনে তিন থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা অনেক সময়েই ৫ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং অনুভব করছি’।
ডিপিডিসি ও ডেসকোর আওতাধীন অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেছেন, ডিপিডিসি দিনে ৩০০ মেগাওয়াট কম উৎপাদন নিয়েই বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিচালনা করছে এবং রাতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: জাতীয় গ্রিড ব্যর্থতা: বিদ্যুৎ বিভাগের ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
ডিপিডিসি ঢাকা শহরের মধ্য ও পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এবং নারায়ণগঞ্জের কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে আছে।
বিকাশ দেওয়ান ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের ডিপিডিসি এলাকায় যেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, সেনানিবাস এবং অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল রয়েছে, সেখানেও বিপিডিবি থেকে তুলনামূলকভাবে কম বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।’
শনিবার সকাল ৭টায় ডিপিডিসি ১৪০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট পেয়েছে এবং কর্মদিবসে চাহিদা এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের মধ্যে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা শহরের উত্তর ও পূর্ব অংশ এবং টঙ্গী শিল্প কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিতরণকারী ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমীর আলী বলেন, বিতরণ সংস্থাটি ১৮২ টি লোডশেডিং সহ ৯৩২ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সন্ধ্যা হলে ডেসকো এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে পারে’।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সরকারি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলেন, শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৮৮৯ মেগাওয়াট, যেখানে অপেক্ষাকৃত কম চাহিদা ১৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট ছিল। যেখানে লোডশেডিং রেকর্ড করা হয়েছিল এক হাজার ১১ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: ঢাকা মহানগরীতে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার মতে, শনিবার সর্বোচ্চ চাহিদার পূর্বাভাস ১৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এবং জেনারেশন পূর্বাভাস ১২ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট এবং সারা দেশে এক হাজার ১৬৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু কঠোরতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সরকার সমস্ত ডিজেল-চালিত প্ল্যান্ট বন্ধ রেখেছিল এবং গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির জন্য প্রচুর সংখ্যক প্ল্যান্ট বন্ধ ছিল।
ওই কর্মকর্তা আরও স্বীকার করেছেন যে সরকারি পরিসংখ্যানে কখনও কখনও বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকৃত ঘাটতির সঠিক চিত্র পাওয়া যায়না। এতে কেবল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর শেষে রেকর্ড করা উৎপাদনের পরিমাণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যখন বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যায়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০-১৩ শতাংশ বিদ্যুৎ সিস্টেমেই হারিয়ে যায়। কারণ পাওয়ার স্টেশন, সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন সিস্টেমের নিজস্ব খরচ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, তাই মানুষ সাধারণত পরিসংখ্যানের তুলনায় ১০-১৩ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পায়।
এদিকে বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনও ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোদমে চালু করতে পারেনি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৭০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে মোট ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, কারণ মোট ৭টির মধ্যে এখনও ৬টি উৎপাদন ইউনিট উৎপাদনে ফিরে আসতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, বাকি ৬টি ইউনিট থাকলে ঢাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা, উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ বিপর্যয়: রাজধানীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে বিশৃঙ্খলা