ডায়াবেটিস মেলিটাস সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে নন-কম্যুনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলকে (এনসিডিসি) কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস)।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে উন্মোচিত এই নির্দেশিকা দেশের ডাক্তারদেরকে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সঠিক চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতে সাহায্য করবে।
ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ ও পরিচর্যার পাশপাশি রোগীদের ব্যক্তিগত সচেতনতা ও ব্যবস্থাপনা জ্ঞান থাকা জরুরি, যার মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখা ১ কোটি ৩১ লাখ, যা বিশ্বে ৮ম সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: জাইকার সঙ্গে সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন বৃত্তির চুক্তি সই
ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগসমূহ (নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস-এনসিডিএস) সারা দেশে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করে জাইকা, যে কারণে ডায়াবেটিস মেলিটাস সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়নে প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে উদ্যোগী হয়।
উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এনসিডিএসের ম্যানেজমেন্ট মডেল প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণসহ এনসিডিসি’র প্রোগ্রাম কার্যক্রমের উন্নয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এনসিডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে জাইকা’র ‘স্ট্রেন্থেনিং হেলথ কেয়ার সিস্টেমস ফর অর্গানাইজিং কমিউনিটিস’ (পূর্বে এসএইচএএসটিও নামে পরিচিত) এর প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্প।
নির্দেশিকা উন্মোচন প্রসঙ্গে জাইকার সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ কোমোরি তাকাশি বলেন, ‘রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ডাক্তারদের সহায়তা করার জন্য ডায়াবেটিস মেলিটাস সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনসিডিসি, ডিজিএইচএস, বাডাস ও বাংলাদেশ সরকারকে কারিগরি সহায়তা দিতে পেরে জাইকা আনন্দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই নির্দেশিকা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের সহায়তা করবে, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করবে, এবং রোগীদের পরিচর্যা ও জীবনমান উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে। এ মাসে আমরা স্ট্রেন্থেনিং হেলথকেয়ার সিস্টেমস ফর প্রিভেন্টিং নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস প্রকল্পটিও উন্মোচন করতে যাচ্ছি, যা ‘এসএইচএএসটিও২’ নামে পরিচালিত হবে। এটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন অংশীদারিত্বের বহিঃপ্রকাশ।’
আরও পড়ুন: হলি আর্টিজানের ঘটনায় প্রাণ হারানো জাপানি নাগরিকদের স্মরণ করেছে জাইকা
ডায়াবেটিস মেলিটাস সংক্রান্ত এই জাতীয় নির্দেশিকা বাংলাদেশে ডায়াবেটিস নির্ণয়, প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রমাণ-নির্ভর দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সাধারণ আচার-অভ্যাস, চাহিদা, ও প্রাপ্যতার বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এটি স্ক্রিনিং, ঝুঁকি নিরূপণ, গ্লাইসেমিক কন্ট্রোল, ওষুধের ব্যবহার, ইনসুলিন থেরাপি, লাইফস্টাইল ইন্টারভেনশনসহ ডায়াবেটিক রোগীর সেবার বিভিন্ন দিক আলোচনা করে, এবং রেটিনোপ্যাথি, নিউরোপ্যাথি ও নেফ্রোপ্যাথিসহ ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
জাতীয় নির্দেশিকা উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ডা. এ কে আজাদ খান, জাইকা বাংলাদেশের’ সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ কোমোরি তাকাশি, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. আখতার হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কম্যুনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।