জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বুধবার বাংলাদেশের পক্ষে রেজুলেশনটি উপস্থাপন করেন এবং কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে শান্তির সংস্কৃতির মহান বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় ১৯৯৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রেজুলেশনটি প্রথমবারের মতো গৃহীত হয়।
এরপর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ শান্তির সংস্কৃতি রেজুলেশনটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন এবং ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি ফোরামের আয়োজন করে আসছে।
এ বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভার্চ্যুয়ালি ‘শান্তির সংস্কৃতি: কোভিড-১৯ এর সময়ে পৃথিবীকে আবার ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের ফোরামটি অনুষ্ঠিত হয়।
কোভিড-১৯ সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রেও যে শান্তির সংস্কৃতির প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের ওই ফোরাম তারই স্বীকৃতি।
মহামারি পরিস্থিতি চলাকালীন অসহিষ্ণুতার উদ্বেগজনক উত্থানের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শান্তির সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশনটি গ্রহণ শান্তির সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর বিশ্বাস ও আস্থার বহিঃপ্রকাশ।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত যা বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে জাতিসংঘ সনদের দায়বদ্ধতার পরিপূরক হিসেবেও ভূমিকা রেখে চলেছে।’
শান্তির সংস্কৃতিকে বাংলাদেশের জনকেন্দ্রিক জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
শিক্ষা, টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার সুরক্ষা, পুরুষ ও নারীর সমতা, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, সহনশীলতা ও সংহতি বজায় রাখা, তথ্য ও জ্ঞানের অবাধ প্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা- এ আটটি ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক নীতি কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে শান্তির সংস্কৃতি ধারণাটি পুরোপুরি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রতিবদ্ধ বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
শান্তির সংস্কৃতি উন্নয়নে অপরিহার্য বিষয়গুলো যেমন শান্তি, সহিষ্ণুতা, উদারতা, অন্তর্ভুক্তি ও পারস্পরিক সম্মান ইত্যাদি যাতে তরুণ সমাজ ধারণ করতে পারে সে জন্য শান্তির শিক্ষা ও বৈশ্বিক নাগরিক হওয়ার শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির সংস্কৃতি ও অহিংসার ধারণাটি এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
তিনি বাংলাদেশ গৃহীত আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি, সহিংস উগ্রবাদ দমন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাসহ বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচির উদাহরণ তুলে ধরেন।
‘আমরা যেহেতু কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে এবং পৃথিবীকে পূর্বের ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, তাই আসুন, আমরা আমাদের জনগণের জন্য, বিশ্বের জন্য এবং উন্নত পৃথিবী বিনির্মাণের বাধা অপসারণের জন্য শান্তির সংস্কৃতি সম্পর্কিত ঘোষণা ও কর্মসূচির প্রতি পুনঃপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই,’ বলেন রাষ্ট্রদূত।
এ বছর ১১০টি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশের এ রেজুলেশনটিকে কো-স্পন্সর করে।
এছাড়া, উল্লেখযোগ্য দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ সময় বক্তব্য দেন।