ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে একরাতে তিন ইউনিয়নের ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ৯টি, পাড়িয়া ইউনিয়নে চারটি ও চাড়োল ইউনিয়নে একটি মিলে মোট ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্থানীয়রা মন্দিরের প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।
এছাড়া, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর ছাড়াও সনাতন ধর্মের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ ‘গীতা’ ছিড়ে ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে দুটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর: গ্রেপ্তার ১
খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত, ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েলসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ধনতলা ইউনিয়নের পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিন্দুরপিন্ডি মন্দির কমিটির সভাপতি জোতির্ময় সিংহ বলেন, ‘প্রায় অর্ধশত বছর ধরে আমরা মন্দিরে পূজা করে আসছি। কোনো দিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শনিবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত জানান, ‘ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার নয়টি, পাড়িয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার চারটি ও চাড়োল ইউনিয়নের সাহবাজপুর নাথপাড়া এলাকার একটি মন্দিরের ওই ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বেশিরভাগ প্রতিমাই রাস্তার পাশে স্থাপিত মন্দিরের।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেসব মন্দিরে কালী, সরস্বতী, লক্ষ্মী ও মনসার প্রতিমা ছিল। সেসব প্রতিমার মাথা, হাত, পাসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজন প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় পেয়ে প্রশাসন ও পুলিশকে খবর দেন।’
দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সমর চ্যাটার্জী বলেন, ‘এই এলাকায় এর আগে এ ধরনের ঘটনার নজির নেই। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মুসলিমদের কোনো বিরোধ নেই। তাই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে, তার কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছে না।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। পুলিশ এ ঘটনায় কাজ করছে। কোনো গোষ্ঠী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশে এসব মূর্তি ভাঙচুর করেছে কি না, এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাবে।’
এছাড়া, তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সচেতনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর, আটক ৩