ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘নৌকা বাইচ’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় ৫ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা
করোনা মহামারি পরিস্থিতির জন্য বিগত দুই বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই ভাদ্রের প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছেন নদীর দুই পাড়ের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। তারা তীরবর্তী ভবনের ছাদ, বিভিন্ন ঘাট ও নৌযানের ওপর বসে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। আবার কেউ কেউ নৌকা ভাড়া নিয়ে পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন।
তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার শিমরাইল কান্দি গাঁওগ্রাম পয়েন্ট থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে পৌর এলাকার মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পর্যন্ত (প্রায় দেড় কিলোমিটার) গিয়ে প্রতিযোগিতা শেষ হয়।
প্রতিযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি নৌকা অংশ নেয়। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের ছয়টি করে এবং কিশোরগঞ্জের একটি নৌকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত
প্রথম চারটি ধাপে ১৩টি নৌকা প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। প্রত্যেকটি ধাপ থেকে একটি করে বিজয়ীসহ চারটি নৌকা চুড়ান্ত প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়।
বিকাল আড়াইটায় তিতাসের শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম পয়েন্টে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
উদ্বোধনের পর রং-বেরঙের বাহারি পোশাক পরিহিত প্রতিযোগী নৌকা বাইচের মাঝিদল তাদের সুসজ্জিত নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এসময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়।
এ সময় বাইচ নির্বিঘ্ন করতে নদীতে জেলা পুলিশ ও নৌ পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দেয়।
প্রতিযোগিতা শেষে বিকালে মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পয়েন্টে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুন প্রমুখ।
প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকারী নৌকাকে এক রাখ টাকা, ২য় অধিকারী নৌকাকে ৬০ হাজার টাকা ও ৩য় অধিকারী নৌকাকে ৩০ হাজার টাকা পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া বাকি অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক দলকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।
নৌকা বাইচে সহযোগীতায় ছিলেন দারাজ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানী লিমিটেড ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিস লিমিটেড।
আরও পড়ুন: ধলেশ্বরীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত