তিনি বলেন, ‘আমরা যে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করছি সেখানে কেউ দুর্নীতি করলে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য এবং আমরা ক্ষমা করবও না।’
রবিবার সকালে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত ১৬টি জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এ হুঁশিয়ারি দেন।
এসময় করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা শুধুমাত্র কৃষি খাতের জন্য এ তহবিল গঠন করব। এ তহবিল থেকে কৃষকদেরকে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে অর্থ প্রদান করব আমরা।’
এ তহবিলের অর্থ গ্রামাঞ্চলের পোল্ট্রি ও দুগ্ধ খাতসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি মশলা জাতীয় পণ্যের জন্য ৪ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
সরকার ইতিমধ্যে ফসল সংগ্রহ প্রক্রিয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ খাতে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে।
কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বীজ ও চারা বিতরণের জন্য সরকার আরও ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ফসল সংগ্রহ এবং সরবরাহের কাজে নিয়োজিতদের চলাচল ও কাজের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কৃষকরা যাতে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারেন সেজন্য প্রতিটি অঞ্চলে একটি উন্মুক্ত জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সাপ্তাহিক হাট (অস্থায়ী বাজার) বসানোর ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত কৃষি নির্ভর একটি দেশ। আমাদের কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে হবে। খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
বাংলাদেশের জমি খুব উর্বর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি যথাযথভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারি, তাহলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা অন্য দেশকেও সহায়তা করতে সক্ষম হব। এজন্য আমাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে যাতে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকার গত মৌসুমের তুলনায় অতিরিক্ত দুই লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহ করবে বলেও জানান তিনি।
সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ এবং সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, কামারসহ সর্বস্তরের মানুষকে সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সকল জেলার স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণকে তাদের নিজ নিজ এলাকা সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে, সংক্রামক এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত সকল জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনাকালে, ইস্টার সানডে উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা।
এ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এর আগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গত ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অন্তর্গত ১৫টি জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।