ভুল তদন্তে সাজা হওয়া নির্দোষ কামরুলের করা রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
রায়ে সার্টিফিকেট জালিয়াতির যে মামলায় নির্দোষ কামরুলের সাজা হয়েছিল, সেই মামলাটির পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মামলাটির তদন্তকারী দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং কামরুল চাইলে দুদকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন বলেও হাইকোর্ট তার আদেশে উল্লেখ করেছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং রিটকারী কামরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন মিনহাজুল হক চৌধুরী।
এর আগে গত মঙ্গলবার এ রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। খুরশীদ আলম খান জানান, ভুল তদন্তে এ ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আমরা লজ্জিত, দু:খিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট
নথি থেকে জানা যায়, এসএসসি পাসের ভুয়া নম্বর ও প্রশংসাপত্র তৈরি করে নোয়াখালীর মাইজদী পাবলিক কলেজে একাদশ শ্রেণিতে (১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তির অভিযোগে কামরুল ইসলামের (ঠিকানা: পূর্ব রাজারামপুর) নামে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে সুধারাম থানায় মামলা করে।মামলার বাদী ছিলেন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রসিকিউটিং পরিদর্শক মো. শহীদুল আলম।
মামলায় বলা হয়, নোয়াখালী সদর থানার পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাসের জাল/ভুয়া মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র সৃজন/সংগ্রহ করে ১৯৮৯-৯৯ সেশনে মাইজদী পাবলিক কলেজে ভর্তি হন। জব্দ করা ভর্তির আবেদনপত্রে কামরুলের জন্মতারিখ ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি ও গ্রাম পশ্চিম রাজারামপুর উল্লেখ রয়েছে।
ঢাবির পিএইচডি থিসিস কীভাবে সংরক্ষণ ও মূল্যায়ন হয়, জানতে চায় হাইকোর্ট
তদন্ত শেষে প্রায় ১০ বছর পর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেন, যেখানে কামরুল ইসলামের গ্রামের ঠিকানা পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করা হয়। মামলাটির তদন্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ মামলায় ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল আদালতে পুলিশের (পিঅ্যান্ডএ) এক প্রতিবেদনে এক সাক্ষীর বরাত দিয়ে বলা হয়, আসামি মো. কামরুল ইসলাম, বাবা আবুল খায়ের, গ্রাম পূর্ব রাজারামপুর ঠিকানা সঠিক নয়। প্রকৃত আসামি কামরুল ইসলাম, বাবা আবুল খায়ের, গ্রাম পশ্চিম রাজারামপুর, যিনি দেশের বাইরে আছেন। এই মামলায় নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালত ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কামরুল ইসলামকে (পিতা: আবুল খায়ের, গ্রাম: পূর্ব রাজারামপুর) দোষী সাব্যস্ত করে তিনটি ধারায় ৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয় রায়ে। সব কারাদণ্ড একসাথে চলবে বলা হয়।
এরপর ওই মামলায় সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করতে গত বছরের অক্টোবরে মোহাম্মদ কামরুল (পূর্ব রাজারামপুর) রিট করেন। এতে যুক্ত এক প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, তিনি বর্তমানে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত। তার সার্ভিস বুক ও এসএসসি পাসের সনদ অনুসারে তিনি ১৯৯০ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ মামলায় উল্লিখিত শিক্ষাবর্ষ (১৯৯৮-৯৯) সময়ে তার বয়স ছিল ৮ বছর। নোয়াখালীর হরিনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মোহাম্মদ কামরুল এসএসসি পাস করেন বলে ওই প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। ওই সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য মোহাম্মদ কামরুলকে কোনো ধরনের হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করতে নির্দেশ দেয়া হয়। মোহাম্মদ কামরুলকে শনাক্তকরণ বিষয়ে দুদককে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
শুনানিতে অংশ নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দুদকের আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান বলেন, এটা ছিল সরল বিশ্বাসে ভুল (বোনাফাইড মিসটেক)। গ্রামের নামে ভুলের যে বিষয়টা এসেছে এটা আমাদের বোনাফাইড মিসটেক। আমরা তার রিটের সাথে একমত। এখানে একটা বিষয় যে, কামরুল কিন্তু একদিনও জেল খাটেনি। আমরা চাই না কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি জেল খাটুক। আদালত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেয়।
এদিকে এভাবে নির্দোষ ব্যক্তির সাজা হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ)।
বুধবার বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ভুল তদন্তের মাধ্যমে জালিয়াতি মামলায় মোহাম্মাদ কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল ও সাজার ঘটনায় উচ্চ আদালতে দুদকের ভুল স্বীকার এবং ‘মামলার এজাহার থেকে তদন্তের সব পর্যায়ে ভুল হয়েছে’ মর্মে দুদকের আইনজীবীর স্বীকারোক্তিই প্রমাণ করে যে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদকের পেশাদারিত্ব কতটা দুর্বল ও অদক্ষতায় ভরা।’
তিনি বলেন, ‘জাহালমের ঘটনা থেকে দুদক শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি ঘটনার তদন্ত কাজ ১০ বছর ধরে চলেছে এবং বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও একজন নির্দোষ মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের ঘটনা ‘সরল বিশ্বাসে’ ঘটেছে বলে আদালতে দুদকের বয়ান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
জন্ম নিবন্ধনে ফিঙ্গার প্রিন্ট কেন বাধ্যতামূলক নয়: হাইকোর্ট
ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, কুষ্টিয়ার এসপিকে হাইকোর্টে তলব