জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, কয়েক বছর ধরে বিদ্যুতের ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন হওয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) 'দ্য রোল অব স্মার্ট গ্রিড ইন দ্য ফিউচার পাওয়ার সিস্টেম' শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, 'চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের একটি স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমের দিকে যেতে হবে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।’
ইউআইইউ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশে ইএসএস সুবিধাসহ প্রথম সোলার এনার্জি ল্যাব উদ্বোধন উপলক্ষে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে এবং ইউআইইউর সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ (সিইআর) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
এই অগ্রণী সোলার ল্যাবটি নবায়নযোগ্য এবং টেকসই শক্তি খাতে শীর্ষস্থানীয় প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার সুযোগ দেবে।
ফাওজুল কবির বলেন, সরকার সৌর ও বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য উৎস চালু করছে। ‘এখন আমাদের স্মার্ট গ্রিডের দিকে যেতে হবে, যা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা ব্যাটারি স্টোরেজ সিস্টেমকেও প্রাধান্য দিচ্ছি।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম রেজওয়ান খান এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও প্যান জুনফেং।
আরও পড়ুন: ভোলায় আরও ১৯টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা
হুয়াওয়ে-সিইআর, ইউআইইউ সোলার ল্যাবটি হুয়াওয়ের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। সুবিধাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা।
হুয়াওয়ে এবং সিইআর, ইউআইইউ যৌথভাবে বাংলাদেশের বাজারের উদ্দেশ্য পূরণকারী প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য বিভিন্ন কোর্স কনটেন্ট তৈরি করবে।
কোর্সের বিষয়বস্তুতে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি, ডিজিটাল শক্তি এবং স্মার্ট শক্তি সমাধানের ক্ষেত্রে সর্বশেষ গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত বিকাশও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইএসএস সিস্টেম সহ প্রথম সোলার ল্যাব উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা নবায়ণযোগ্য জ্বালানি খাতে আমাদের তরুণদের সম্পৃক্ততার দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইএসএস সিস্টেমসহ প্রথম সোলার ল্যাব উদ্বোধনকালে চীন-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ইয়াও ওয়েন উল্লেখ করেন, এই সহযোগিতা কেবল চীনা বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিভা বিকাশের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে না বরং সৌর শক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে ইউআইইউর শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে দীর্ঘকালীন অবদানকেও তুলে ধরে।
প্যান জুনফেং বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণের ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।’
তিনি আরও বলেন, সেই আলোকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হুয়াওয়ে ডিজিটাল পাওয়ার বাংলাদেশের গ্রাহকদের ৬০০ মেগাওয়াট+ ডিজিটাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে সহায়তা করেছে। যা ৪৩৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এতে কার্বন নিঃসরণ ২ লাখ ৭ হাজার ৮৬৭ টন কমেছে, যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫০টি গাছ লাগানোর সমতুল্য।
তিনি বলেন, আইসিটি ও ডিজিটাল পাওয়ারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়ে এবং দেশের স্বনামধন্য জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র ইউআইইউ'র সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ যৌথভাবে এই সোলার ল্যাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে জানার, বেড়ে উঠতে ও অবদান রাখতে পেশাদারদের ব্যাপক সুযোগ করে দিতে পারে।
ইউআইইউ সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের (সিইআর) পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সৌর বিদ্যুৎ ক্রমবর্ধমান ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরগুলোতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার নতুন সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, দেশ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখেছে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই নতুন ছাদে রেকর্ড ৪২ মেগাওয়াট (মেগাওয়াট) সৌর ক্ষমতা যুক্ত করেছে।
শাহরিয়ার আলম অবশ্য বলেন, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতায় সজ্জিত করতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রয়োজন। এই খাতে আমাদের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের বাস্তব জ্ঞানার্জনে এই ল্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানির ক্ষেত্রে গবেষণা বৃদ্ধি, এর ব্যবহার ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ (সিইআর) প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য প্রায় সব সোলার ডিজেল হাইব্রিড মিনি-গ্রিড ডিজাইন করেছে সিইআর, ইউআইইউ।
সিইআর ইডকল মানদন্ড অনুযায়ী সোলার পিভি সরঞ্জামের সার্টিফিকেশনের জন্য বাংলাদেশে সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) সরঞ্জামের অন্যতম পরীক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করা হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা