দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গোপনীয়তার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘নিত্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি… মূল্যস্ফীতির পূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে রবিবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস একথা বলেন।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা জানেন, চলতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছয়টি বন্যা হয়েছে… বন্যার ফলে অনেক জায়গায় ফসলহানি হয়েছে, ব্যাহত হয়েছে পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল। বন্যা-পরবর্তী সময়ে বাজারে শাক-সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে আপনাদের কষ্ট হয়েছে।’
আরও পড়ুন: জি-২০ সামাজিক সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন অধ্যাপক ইউনূস
তিনি বলেন, ‘নিত্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ানো জন্য আমরা সাড়ে ৯ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এজন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ডিমের উৎপাদকরা যাতে সরাসরি বাজারে ডিম সরবরাহ করতে পারেন, সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।’
মানুষ যাতে স্বল্প মূল্যে কৃষিপণ্য কিনতে পারে, সেজন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্পটে সরকারি কিছু পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রস্তুত করা ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখ কার্ড ইতোমধ্যে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সংস্কার করা হবে: ব্রিটিশ মন্ত্রীকে ড. ইউনূস
‘বন্যার ফলে চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও দাম যাতে স্বাভাবিক থাকে, এজন্য সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে।’
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমাদের কোনো লুকোছাপা নেই। মূল্যস্ফীতির পূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি রোধে উচ্চ সুদহার নির্ধারণসহ একাধিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে- শস্য আমদানিতে এলসি সীমা অপসারণ ও সরবরাহ চেইন সংক্ষিপ্ত করা।’
তিনি আরও জানান, সামান্য হলেও জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছে। শিল্প কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যাহত না হয় এবং রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। গণ শুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম না বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এসব পদক্ষেপ বাজারে পণ্যমূল্য কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।