প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বলেছেন, নির্বাচনের আগে নানামুখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে আগামী নির্বাচনটা হবে একটা চ্যালেঞ্জ।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার (৫ জুন) তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: টোকিওতে জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, বাংলাদেশে চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশটির প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের পক্ষে অবস্থান না নিলে নির্বাচন বয়কট করার অঙ্গীকার করেছে।
তবে সরকার এ দাবিকে অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যখনই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার কিছুটা উন্নতি হয়, তখনই দেশে কিছু ‘কুলাঙ্গার’ আছে, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং সর্বত্র মিথ্যাচার করে।
তিনি বলেন, কিছু লোক আন্তর্জাতিক অনুদান পাওয়ার জন্য বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা গল্প তুলে ধরে।
এসময় সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করে নাই, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন করেছে তারা আছে, তাদের আওলাদ আছে তারা সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেই যাচ্ছে।’
ভোট কারচুপি বিএনপির অভ্যাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে কারচুপি করা বিএনপির অভ্যাস। ভোট চুরি করা এটাই তাদের রেকর্ড। গণতন্ত্রহরণ করা এটাই তাদের রেকর্ড। তো ওদের মুখে এখন আবার আমরা গণতন্ত্র শুনি।”
তিনি বলেন, ‘যারা মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে তৈরি দল তাদের কাছে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। তাদের কাছে ভোটের কথা শুনতে হয়। তো চুরি করা সবাই যাদের অভ্যস, তো চোরদের কাছে আমরা বাংলাদেশের জনগণ কি শুনবে, কি দেখবে।’
আ.লীগ সভানেত্রী তার দলের সদস্যদের দলকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সংগঠনটি আরও শক্তিশালী হয়।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তার দল টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় এবং দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার কারণে এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। আজ আমরা সফলভাবে পরিবর্তন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো- গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার কমেছে। ঢাকা শহরে দারিদ্র্যের হার বেশি হলেও গ্রামাঞ্চলে কম। কেউ অতীতে এটি ভাবতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার রক্ষা করেছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম, পরিবহন খরচ, গ্যাস, জ্বালানি ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে, এখনও একটি মজুদ রয়েছে যা পাঁচ মাসের জন্য খাদ্য সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় চাহিদা মেটাতে এবং রপ্তানি করার জন্য দেশে এক টুকরো জমিও অনাবাদি না রেখে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বলেন।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশেও খাদ্যের দাম বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ ভুগছে। কিন্তু পণ্য পাওয়া যাচ্ছে (বাজারে) এবং কোনো জিনিসেরই অভাব নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এবারও ধান ও অন্যান্য ফসলের ভালো ফলন হয়েছে।
তিনি বলেন, পণ্যের দাম বাড়লেও সবজি, মাছ-মাংস সবকিছুই উৎপাদিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি তার সরকারের রেকর্ড সবচেয়ে বড় জাতীয় বাজেট হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এত বড় বাজেট অতীতে কেউ দিতে পারেনি।
এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই কঠিন সময়ে সরকার এমন বাজেট দিতে পেরেছে।
তিনি বলেন, বাজেটে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভাতার আকার উভয়ই বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার একটি কার্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছে যাতে নিম্নআয়ের লোকেরা তাদের ভোগান্তি লাঘব করতে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল ও ভোজ্যতেলসহ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারে।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সুনাকের সঙ্গে শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার