প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দুদের একটি অংশের তীব্র নিন্দা করেছেন, যারা এটা বোঝাতে চান যে তারা বাংলাদেশে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই যে, যখনই এখানে কোনো ঘটনা ঘটে, তা দেশে-বিদেশে এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন এদেশে হিন্দুদের কোনো অধিকার নেই।’বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পবিত্র জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির ও চট্টগ্রামের জেএম সেন হলে কার্যত হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, যে কোনো ঘটনা ঘটলেই তার সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু হিন্দুদের কোনো অধিকার নেই বলে ওই ঘটনাকে রং চড়ানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর সরকারের পদক্ষেপ যথাযথভাবে নজরে আসে না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্দির রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে বহু মুসলমান নিহত হয়েছেন। ‘এ ধরনের ঘটনাও ঘটেছে।’
তিনি তার মন্তব্যের সমর্থনে কুমিল্লার ঘটনা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানকে শেখ হাসিনা
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এগুলো ঠিকভাবে প্রচার হয়নি। পরিবর্তে, এটি ছড়িয়ে দেয়া হয় যে দেশে হিন্দুরা খুব কষ্টে বাস করছে।’
তিনি বলেন, ঢাকায় পূজা মণ্ডপের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতার চেয়ে বেশি। এবং সারা বাংলাদেশে দুর্গাপূজা ব্যাপক সমারোহে পালিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শুধু মসজিদ মেরামত বা সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না, মন্দির, মঠ ও গীর্জাও সংস্কার বা মেরামত করছে।
তিনি বলেন, ‘কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু বলা ঠিক নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের একটি ব্যতিক্রমী দেশ, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করে।
তিনি বলেন, ‘দেশের এই সহানুভূতিশীল ধর্মীয় পরিবেশকে ধ্বংস করার ব্যাপক চেষ্টা চলছে। প্রতিটি ধর্মের লোকদের একটি অংশ আছে, যারা প্রায়ই সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করে।’
তিনি আরও বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ কোনো ধর্মকে অবমূল্যায়ন করায় বিশ্বাস করে না।
শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা এটা পরিষ্কারভাবে বলতে পারি। আমাদের সরকার এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি।’
তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে।
আরও পড়ুন: সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর উপায় বের করছে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই দেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। আপনি এই দেশের মানুষ, এখানে আপনার সমান অধিকার আছে, আমার মতো আপনারও একই অধিকার রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী হিন্দুদের নিজেদেরকে সংখ্যালঘু না ভাবতে অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা সবসময় মনে করবেন যে আপনি এই দেশের নাগরিক, আপনারাও সমান অধিকার ভোগ করবেন এবং আমরাও আপনাদেরকে সেভাবেই দেখতে চাই। অনুগ্রহ করে নিজেদের অবমূল্যায়ন করবেন না। আপনারা এই দেশে জন্মেছেন এবং আপনারা এই দেশেরই নাগরিক।’
তিনি বলেন, এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে সবাই চলতে পারলে সব ধর্মের অশুভ মহল কখনোই দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সেই বিশ্বাস ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে। আমি আপনাদের সবার কাছ থেকে এটাই চাই।’
করোনাভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এগুলো সবার জন্য বড় সমস্যা তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছি, ফলে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিছু লোক এর চেয়েও বেশি অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য অযথা দাম বাড়াচ্ছে,।’।
তিনি বলেন, সরকার দাম মনিটরিং ও পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা করছে।
তিনি ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সরকার এক কোটি মানুষকে বিশেষ পরিবার কার্ড দেবে, যার মাধ্যমে তারা ন্যায্যমূল্যে চাল, মসুর, তেল ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নিচে দাম রাখার চেষ্টা করছি, যাতে তারা ভোগান্তিতে না পড়ে।’
সারা বিশ্বে খাদ্য সংকট এবং সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করে তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনে ব্যবহার করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: আ.লীগের প্রতি জনগণের আস্থা সরকারের সাফল্যের চাবিকাঠি: প্রধানমন্ত্রী