তুচ্ছ ঘটনার জেরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং নিউমার্কেটের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের মধ্যে হওয়া টানা দুই দিনের সংঘর্ষের পর আবারও খুলতে শুরু করেছে নিউমার্কেট এলাকার দোকানপাট।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে নিউমার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নুরজাহান মার্কেট আবার খুলতে শুরু করে এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুরো মার্কেট খুলে যায়। খোলার পর থেকে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
দোকান মালিকদের একজন তামিম বলেন, ‘দুই দিন আগে ঈদ উপলক্ষে দোকানের জন্য কাপড় সংগ্রহ করেছি। কিন্তু সবই পুড়ে গেছে।’
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা আশা করেছিলেন যে তারা এই ঈদ বাজারে করোনা মহামারির ক্ষতি পূরণ করতে পারবেন। কিন্তু সংঘর্ষে তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কি না জানতে চাইলে আরেক দোকান মালিক সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই ঈদের দুই দিন লোকসান হওয়ায় আমরা আমাদের ব্যবসায় লোকসান গুনছি। তবে ক্রেতারা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বাজারে আসেন, আমি আশা করি আমরা আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’
আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: বিএনপি নেতা মকবুল গ্রেপ্তার
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতিটি মার্কেটের মালিক ও কর্মচারীদের আচরণগত প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করছি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ওই দিনগুলোতে নিউ সুপার মার্কেটের সাড়ে তিন হাজার দোকান, নিউমার্কেটের সাত শতাধিক দোকান, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ৫০০ দোকান এবং গাউসিয়া মার্কেটের ৪০০ এর বেশি দোকান বন্ধ থাকায় তাদের ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
এতে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।
পুরো বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং ক্রেতাদের পণ্য কিনতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: নিউমার্কেটের সংঘর্ষই প্রমাণ করে দেশে কোনো সরকার নেই: ফখরুল
সাভার থেকে আসা গ্রাহক রকিবুল হাসান বলেন, ‘এখানে আমরা খুব কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারি। আমি এখানে আমার পরিবারের জন্য ঈদের পোশাক কিনতে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার আমি এখানে আসতাম, কিন্তু সংঘর্ষের কারণে মার্কেট বন্ধ ছিল। আমি আশা করছি ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি পূরণ করতে সক্ষম হবেন।’
শুক্রবার সকালে নিউমার্কেটে আসা ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আফরোজ বলেন, ‘আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের দামি পোশাক কেনার সাধ্য নেই। তাই আমরা নিউমার্কেট পছন্দ করি, কারণ এখানে আমরা যুক্তিসঙ্গত মূল্যে জিনিস কিনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল আমার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংঘর্ষের কারণে আমার ও আমার পরিবারের জন্য ঈদের জামাকাপড় কিনতে দেরি হওয়ায়ে যেতে দেরি হলো।’
নিউমার্কেটে সংঘর্ষ
সোমবার মধ্যরাতে নীলক্ষেত মোড়ে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ ৩০ জনের বেশি আহত হয়।
সহিংস এ সংঘর্ষের ঘটনায় এক হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনটি মামলার মধ্যে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ঢাকা কলেজের ৯০০ জন অজ্ঞাত ছাত্র ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশের কাজে বাধা দেয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর ভাংচুরের অভিযোগে আরও একটি মামলা করেন নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষে নিহত ডিলিংক কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি ম্যান নাহিদ হোসেনের চাচা সৈয়দ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করেছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫০-২০০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে পুলিশ।
এর আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সহিংস সংঘর্ষে আহত আরও একজন বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: ৩ মামলায় আসামি ১৩০০