সাতক্ষীরা সিটি কলেজের প্রভাষক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি জেলা জামায়াতের সাবেক প্রচার সম্পাদক আলতাফ হুসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব)-১ এর সদস্যরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মধুখালি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
আলতাফ হুসাইন সাতক্ষীরা সদরের রাজনগর গ্রামের আহসানউল্লাহের ছেলে।
তার বিরুদ্ধে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার নামে জমি কেনাবেচার দালালি ও সুনির্দিষ্ট প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানতে পারে তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় হত্যাসহ ১৫ টি মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আলতাফ হুসাইন শহরের রাজারবাগান এলাকায় একটি বাড়ি কিনে সপরিবারে বসবাস করতেন। ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভের পর তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন জামায়াতের ক্যান্টনমেন্ট খ্যাত এলাহি বক্স একাডেমি ও মোসলেমা কিন্ডারগার্টেনে। জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রভাবশালী নেতা। এই সুযোগ ধরে তিনি দৈনিক সংগ্রামের জেলা প্রতিনিধি হন। জোট সরকার আমলে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে। এরপর তিনি হন সাতক্ষীরার জামায়াত নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক আলোর পরশ এর সম্পাদক।
আরও পড়ুন: বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় সাতক্ষীরায় আ’লীগের ৯ নেতা-কর্মী বহিষ্কার
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরায় জামায়াত শিবিরের সহিংস তাণ্ডবের সময় আলতাফ হুসাইন ও জামায়াতের আরেক নেতা ফিংড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও প্রভাষক এবিএম মামুন হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এসময় মামুনের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
জামায়াতের এই তাণ্ডবের সময় অনেক সাধারণ নাগরিকের দোকানপাট,বাড়িঘর ভাংচুর করার পর অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং জামায়াত শিবির বাহিনীর হাতে একে একে হত্যার শিকার হয় প্রভাষক মামুন সহ ১৭ জন। জেলাব্যাপী অবরোধ সৃষ্টি করে রাস্তার ধারের গাছপালা কেটে ফেলে তারা। এর প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন আলতাফ হুসাইন।
এসব ঘটনায় সাতক্ষীরার যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামী সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক,আজিজুর রহমান, আলতাফ হুসাইন,রফিকুল ইসলাম,শাহাদাত হোসেন,মো. আলী,ইমান আলী ও হাবিবুর রহমান সহ ১৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
২০১৩ এর ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ফাসির রায় ঘোষণার পর সাতক্ষীরায় ঘোষণা দিয়ে সহিংসতায় নামে তারা। প্রথমেই তারা তান্ডবলীলা চালিয়ে হত্যা করে এবিএম মামুনকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি মাঠে নামে। এসময় বেশ কয়েকজন নিহত হয়। এসময় সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায় আলতাফ হুসাইন সহ তার সহযোগীরা।
আরও পড়ুন: দেশের প্রথম ভাসমান মসজিদ ও সাতক্ষীরার একজন ইমামের গল্প
সাতক্ষীরা সদর থানায় এসটিসি-১১১/২০১৯, এসটিসি-১১২/২০১৯, এসটিসি-১৩৩/১৯১৭ সহ ১৫টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
২০১৭ সালে আলতাফ হুসাইন নিজেকে ‘নিখোঁজ’ বলে কৌশলে খবর প্রচার করেন। পরে তাকে ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে পারিবারিকভাবে প্রচার দেওয়া হয়। এরপরও জামায়াতের এই নেতার কোন চেহারা সাতক্ষীরায় দেখা যায়নি। তিনি ঢাকায় থেকে জমির দালালি করতেন বলে বিভিন্ন সময় খবর পাওয়া যেতো।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাবুল আখতার জানান, একাধিক মামলার আসামি জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইনকে সাতক্ষীরায় নিয়ে আসার আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দেয়া যাবে।