বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে জেলায় ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত আটটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৭ জনকে।
এর মধ্যে একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মামলায় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আসামি করা হয়েছে।
ফেনী মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে সর্বশেষ মামলাটি দায়ের হয়েছে। গত ৫ আগস্ট দুপুরে শহরের জেলরোডে স্বামী জাফর আহম্মদকে (৫৩) কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ করে স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে আইভীসহ ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে এক নম্বর ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্যাহকে আসামি করে ২০৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি করা হয়।
নিহত জাফর আহম্মদ পেশায় ব্যাটারি চালিত রিকশাচালক ছিলেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুরের মোমিন টেইলার বাড়ি।
এছাড়া গত ৪ আগস্ট মহিপালে নির্বিচারে গুলিতে মাহবুবুল হাসান মাসুম
(২৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে একই থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এদিকে শিহাব হত্যা মামলায় ৩০১ জন, শ্রাবণ হত্যা মামলায় ৩০৫ জন, মাসুদ হত্যা মামলায় ৩৩৪ জন, সবুজ হত্যা মামলায় ৪৬৫ জন, সাকিব হত্যা মামলায় ৩৭১ জন এবং অপর একটি হত্যা মামলায় ২৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাতুড়িপেটা করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষের মামলা
তাদের নিহতের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দায়ের করা পৃথক মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন- ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর এলাকার মোহাম্মদ মমতাজুল হকের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মো. এনামুল হক, সদর উপজেলার মোটবী এলাকার মো. হানিফের ছেলে মো. আলা উদ্দিন, শহরের বারাহীপুর এলাকার মৃত মো. সাদেকের ছেলে যুবলীগ কর্মী শাহাদাত হোসেন শাহীন ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শিহাবসহ ৬ জন।
তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে এসব ঘটনায় দায়ের করা পৃথক আটটি মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথমদিন ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে অস্ত্রধারীরা। এতে নয়জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি এবং সিসি ফুটেজে দেখা গেছে, অস্ত্রধারীরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
আরও পড়ুন: জামালপুরে দুই বছর আগে মারা যাওয়া ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা