রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে মুহুর্তের মধ্যে একটি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
এছাড়া আতঙ্কে আরও চারটি পরিবার অন্যত্র সরে গেছে।
প্রায় ১০০ মিটার এলাকায় ভাঙনের কারণে তিন ও চার নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে ভাঙনে ছয় সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে দৌলতদিয়ার তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়।
আড়াইটার দিকে ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে নদী পাড়ে সিদ্দিক কাজী পাড়ার সালাম বেপারীর বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
আতঙ্কে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ঘরের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দেয়।
রাতেই সালাম বেপারীসহ আব্দুর রহিম বেপারী, হান্নান কাজী, মকাই মোল্লা ও একেন বেপারীর পরিবার ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে ফেলে।
আরও পড়ুন: ঢাকামুখী মানুষদের দৌলদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করার অনুরোধ নৌপ্রতিমন্ত্রীর
এই পাঁচটি পরিবার ফেরি ঘাটের অদূরে নিয়ে ঘরের চালাসহ জিনিসপত্র রেখেছেন।
এদিকে খবর পেয়ে রাতে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আব্দুস সাত্তার রাত আড়াইটার দিকে সরেজমিন এসে তিন নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ করে দেন।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, বুধবার রাত আড়াইটার দিকে তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙনের খবর পেয়ে রাতেই ঘাট পরিদর্শনে আসেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তখন থেকে তিন নম্বর ঘাটটি বন্ধ করে দেন।
প্রায় ১০০ মিটারের মতো জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়ায় পাশের চার নম্বর ঘাট ভাঙনের মুখে পড়ে। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চার নম্বর ঘাটটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, চার নম্বর ঘাটের পন্টুনের মেরামত কাজ চলায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষে রাতের মধ্যে ঘাটটি চালু করা যাবে বলে আশা করছি। এর আগে ছয় সেপ্টেম্বর প্রায় ১০০ মিটারের মতো জায়গা ভাঙন দেখা দেয়ায় পাঁচ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে।
ভাঙনে তিন, চার ও পাঁচ নম্বর তিনটি ফেরি ঘাট বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে ছয় ও সাত নম্বর ঘাট চালু রয়েছে।
ভাঙন প্রতিরোধে বিআইডব্লিউটিসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিন ও পাঁচ নম্বর ঘাট চালু করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১০টি ফেরি চলাচল করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ক্ষতিগ্রস্ত সালাম বেপারীর ছেলে আশিক বেপারী বলেন, আমাদের মতো শতাধিক পরিবার ফেরিঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজী পাড়ায় বাস করছি। বুধবার রাত দুইটার পর তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় হঠাৎ পানির শব্দ বেড়ে যায়। শব্দের ভয়ে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। দেখতে দেখতে চোখের পলকে আমাদের একটি ঘরের ভিটা বিলীন হয়ে যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য ঘরের জিনিসপত্র দ্রুত সরিয়ে নেই। এ সময় স্থানীয় আব্দুর রহিম বেপারী, হান্নান কাজী, মকাই মোল্লা ও একেন বেপারীর ঘর ভেঙে দ্রুত সরিয়ে ফেলে। যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় আমরা কোথায় যাব সেই চিন্তা করছি। রাত দুইটার পর থেকে ভাঙন শুরু হলেও বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে বালুর বস্তা ফেলা শুরু করেছে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান কেউ খোঁজও নিতে আসেনি।
ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নতুন করে পানি বাড়তে থাকায় নদীতে প্রচন্ড স্রোতের দেখা দিয়েছে। স্রোতের তীব্রতায় তিন নম্বর ফেরি ঘাট এলাকার প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার নির্দেশনা দিয়েছি।
বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে তিন ও চার নম্বর ঘাট এলাকা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি আজকের মধ্যে তিন নম্বর ঘাট এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শেষ হবে। তবে ঘাটটি চালু হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
এছাড়া ৬ সেপ্টেম্বর ভাঙনে বন্ধ হওয়া পাঁচ নম্বর ঘাটটি চালু করতে পানি কমার অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু নতুন করে পানি বাড়ায় আপাতত চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা।
আরও পড়ুন: তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন, ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ