যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে ডাবল লেনের এই রেললাইন সেতু। নির্মিত হলে এটি হবে দেশের বৃহত্তম একক রেল সেতু।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পরামর্শক সংস্থা ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড, জাপানের ছোডাই কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশের এসিই কনসালট্যান্টস লিমিটেড এবং ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড বাংলাদেশের সহযোগিতায়-এরই মধ্যে রেল সেতুর বিস্তারিত নকশা সম্পন্ন করেছে।
মূল সেতু দুটি প্যাকেজের অধীনে নির্মিত হবে। পূর্ব ও পশ্চিম অংশের নকশা ও অবকাঠামো কাজের জন্য যথাক্রমে ওবায়শি-টোয়া জেএফই, জাপান এবং আইএইচআই-এসএমসিসি জেভি, জাপানের সাথে ইতোমধ্যে দুটি পৃথক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ওবায়শি করপোরেশন, টোয়া করপোরেশন এবং জেএফই’র যৌথ উদ্যোগে ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর পূর্ব অংশটি নির্মাণ করা হবে। আইএইচআই এবং এসএমসিসি যৌথ উদ্যোগে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পশ্চিম অংশে কাজ করবে।
চুক্তি অনুসারে চলতি বছরের জুলাইয়ে উভয় ঠিকাদারের কাছে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।
মূল প্রকল্পের কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল-লাইন ডুয়েল-গেজ সেতু নির্মাণ, ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল-লাইন রেলপথ যোগাযোগ বাঁধ নির্মাণ, ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ডুয়েল-গেজ রেলপথ নির্মাণ, ১৬টি রেল যোগাযোগের ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ছোট সেতু ও কালভার্ট, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন ও ইয়ার্ডগুলোর সংস্কার ও পুন:নির্মাণ।
নতুন সেতুর ওপর দিয়ে ব্রডগেজ লাইনে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ লাইনটিতে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে রেল চলতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মিত হলে ৮৮টি রেল চলাচল করতে সক্ষম হবে।
প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত এক লাইনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে যা ঢাকাকে বঙ্গবন্ধু সেতুর মাধ্যমে পশ্চিম অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই রুটে দিনে সর্বোচ্চ ২২টি ট্রেন চলাচল করতে পারে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত রেল সেতু এবং একটি ডাবল-লাইন ডুয়েল-গেজ লাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটি ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে যা ২০২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
অনুমোদিত ব্যয়ের মধ্যে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এবং ২ হাজার ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে আসবে।
তবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ বিশদ নকশা তৈরির পর দুটি মূল কাজের ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও জমি অধিগ্রহণ, জমি ইজারা এবং একটি যাদুঘর নির্মাণের ব্যয়ও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করায় মোট ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। ৩ মার্চ প্রকল্পের ব্যয় সংশোধন করা হয় এবং এর মেয়াদ ২০২৩ সাল থেকে দুই বছর বাড়ানো হয়।
প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মোট অর্থের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৬৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং জাইকা ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা সরবরাহ করবে।
২০১৪ সালের ২৫ থেকে ২৮ মে টোকিও সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সাথে সাক্ষাতকালে জাপানকে এই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
পরে, ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ঢাকা সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি উত্থাপন করেন।