অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক উভয় ধরনের সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা একটা পরিবার। আমাদের লক্ষ্য একটাই। আমরা আমাদের যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ে এনজিওগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
তাদের এই প্রচেষ্টায় সমর্থন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক সমাধান না খুঁজে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
তার বক্তব্যে ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানান অধ্যাপক ইউনূস।
৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার দ্বিতীয় জাতীয় ভাষণ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যায় রবিবার দুপুর পর্যন্ত ১১টি জেলার ৭৩টি উপজেলার অন্তত ১০ লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রবিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত নতুন করে কেউ মারা না গেলেও মৌলভীবাজারে দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন।
আরও পড়ুন: বন্যা মোকাবিলায় এনজিওগুলোর দক্ষতা কাজে লাগানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, নোয়াখালীতে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন করে এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন। ৫৪৫টি পৌরসভা ও ইউনিয়ন জুড়ে বিস্তৃত এই বন্যায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংকটের মধ্যে ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ জন। পাশাপাশি ২২ হাজার ২৯৮টি গৃহপালিত পশুও রাখা হয়েছে।
সরকার দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ৭৪৮টি মেডিকেল টিম মোতায়েন করেছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় বন্যাকবলিত ১১ জেলায় তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দের পাশাপাশি ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেজ শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের গো-খাদ্য বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
বেসরকারি সংস্থা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও ত্রাণ তৎপরতায় যোগ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনা তৈরির প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার
বন্যাকবলিত এলাকার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন অংশীজনরা কাজ করে যাচ্ছেন।