বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র উপস্থাপন করার পর গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দোরাইস্বামী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অত্যন্ত বিশেষ অংশীদার ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাদের বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক ঊর্ধ্বে, কারণ এ বন্ধুত্ব রচিত হয়েছে অভিন্ন ত্যাগ, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আত্মীয়তার অনন্য সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে।’
পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে দুই দেশের অংশীদারিত্বের উৎস হিসেবে বর্ণনা করে হাইকমিশনার বলেন, ‘ঐতিহাসিক জনযুদ্ধের মাধ্যমে স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে নিজেদের একটি জাতিতে রূপদানকারী হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের চেতনার প্রতি আমরা গভীরভাবে প্রশংসা ও সম্মান জানাই। আপনারা অসংখ্য মৃত্যু ও মা-বোনেদের প্রতি বর্বর নির্যাতন উপেক্ষা করে অনন্য সাহস এবং বীরত্বের সাথে নিজেদের ওপর হওয়া অত্যাচার ও কঠোরতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণা। মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের সহায়তা করতে পারা আমাদের জন্য সবসময়ই সম্মানের বিষয় হয়ে থাকবে যেমনভাবে, প্রায় ৫০ বছর পরেও আপনাদের সাহসের প্রতি ভারতে আজও আমরা সম্মান জানাই।’
সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতির জন্য বাংলাদেশ আজ সমানভাবে সম্মানিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একইভাবে, দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুততম গতিতে আপনাদের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে আমরা আপনাদের বিশ্বখ্যাত আন্তরিকতা এবং আতিথেয়তার চেতনার প্রশংসা করি। আজ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সাফল্য বা ক্রিকেট পিচে টাইগারদের অপ্রতিরোধ্য মনোবল যাই হোক না কেন, সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুন সম্মানের সাথে দেখছে। এবং আমরা, আপনার নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে, এ উপযুক্ত স্বীকৃতিতে আনন্দিত।’
‘এ চেতনায় এবং মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও আমাদের দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর স্মরণীয় বছরগুলোর স্বীকৃতি হিসেবে আমি মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ অংশীদারিত্বের জন্য আমার সেবা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা আমাদের ইতিহাসকে এ মুহূর্তে নিয়ে এসেছেন। তাই আমি আখাউড়া স্থল সীমান্ত থেকে সরাসরি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর পরিদর্শন করে তার উজ্জ্বল নেতৃত্বের প্রতি আমার বিনীত ও আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি এবং আমি আগামীকাল সাভারে যাচ্ছি বাংলাদেশের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে,’ বলেন দোরাইস্বামী।
নিকটতম সম্পর্কেরও পরিচর্যা করা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সরকার আমাকে ঠিক তাই করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা এ অংশীদারিত্বকে সর্বস্তরে প্রচার করতে কোনো সুযোগই ছাড়ব না। আমরা উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মাধ্যমে এ অংশীদারিত্বের পক্ষে সর্বোচ্চ সমর্থন জানাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারের নির্দেশ এ দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে যে বাংলাদেশের সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ কারণেই, কোভিড মহামারির মধ্যেও, আমাদের পররাষ্ট্র সচিব বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্থগিতের পরে বাংলাদেশকে তার প্রথম সফরের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আমরা খুব শিগগিরই বিমান চলাচল শুরু করার জন্য আপনার সরকারের সহায়তায় একটি বিশেষ ‘এয়ার বাবল’ ব্যবস্থা চালু করব। আমরা কোভিড মোকাবেলায় যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমনভাবে কাজ করব যাতে আপনারা স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন এবং যা আপনাদের অগ্রাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত করে এবং এ বন্ধুত্বের প্রতি আমাদের মূল্যবোধকে প্রকাশ করে।’
‘আমি নিশ্চিত, আমরা যতই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের নেতারা আমাদের সম্পর্কের জন্য তাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেবেন। আমাদের এ প্রচেষ্টায় গণমাধ্যমের বন্ধুদের সবসময় সহায়তা কামনা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যাশা পূরণে আমি এবং আমার সহকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব এবং আপনাদের সমর্থন ও শুভেচ্ছার জন্য কৃতজ্ঞ থাকব। আমরা বন্ধু, অংশীদার এবং প্রতিবেশী হিসেবে সর্বদা আপনাদের জন্য উপলব্ধ থাকব,’ বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার।