২০০৯ সাল থেকে তার সরকারের বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ফ্রান্সসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের ফ্রান্সসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) তার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই। এ সময় শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ৬ বছরের জিএসপি+ সুবিধা দিতে ইইউ'র প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য, বন্যা ও খরার মতো বিষয়গুলো কমে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামে এখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য গ্রামাঞ্চলে ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। শহরাঞ্চলেও এ ধরনের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে।
তারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা শিক্ষা বা কাজের সঙ্গে জড়িত নয়।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন ছাড়া অপরাধ পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না।
তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে আরও চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চতুর্থ প্রজন্ম এখানে বসবাস করছে।
তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে পাকিস্তান তাদের ফেরত নেবে না। তাই আমরা এখানে তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করছি।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করুন: প্রার্থীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
তিনি ফরাসি গ্যাস কোম্পানিগুলোকে অনুসন্ধানসহ বাংলাদেশের গ্যাস খাতে বিনিয়োগের অনুরোধ জানান।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও হাইকমিশনার এয়ারবাস ক্রয় ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ দ্বিপক্ষীয় কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর একটি বার্তা হস্তান্তর করেন।
তিনি দু'দেশের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন, যা বিশেষ করে ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফর এবং ২০২৩ সালে ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরের পর জোরদার হয়েছে।
জলবায়ু ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ বাংলাদেশকে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ইউটিলাইজেশন ফান্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হিসেবে দেখতে চায়।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশকে গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশনে সহায়তা করতে চায়।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, তার দেশ ব্লু ইকোনমি ও সাইবার নিরাপত্তায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি তহবিল সম্পূর্ণরূপে চালু করুন: ধনী দেশগুলোর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান