বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে একটি বড় কাজের পরিকল্পনা ছিল সদ্য প্রয়াত ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের। সাইমনের জীবনের শেষ ২৬ বছরের সঙ্গী ফিয়োনা ম্যাকফারসন ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে এই পোস্টে সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়নি।
গত শুক্রবার রোমানিয়ায় ৭৭ বছর বয়সী প্রখ্যাত এই সাংবাদিকের মৃত্য হয়।
ওই পোস্টে প্রিয় সঙ্গীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিয়োনা লিখেছেন: হাসপাতাল থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে মৃত্যুর সময় সাইমনের গায়ে বাংলাদেশের একুশে টিভির লোগো সংবলিত পোলো টি-শার্ট ছিল। তাদের জমজ কন্যা ইন্ডিয়া ও আভা তাদের বাবার মূল্যবান স্মৃতি হিসেবে এই টি-শার্টটি সংরক্ষণ করেছে।
বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সাইমনের যোগাযোগ ও গভীর বন্ধনের কথা ফিয়োনা তাঁর এই পোস্টে উল্লেখ করেছেন।
ফিয়োনা তাঁর পোস্টে আরও লিখেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমি আমার ২৬ বছরের প্রিয়তম সঙ্গী ও আমাদের আশীর্বাদপুষ্ট যমজ কন্যাদের বাবা সাইমন ড্রিংয়ের আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত মৃতুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে জরুরি একটি রুটিন অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হলেও ১৬ জুলাই স্থানীয় সময় রাত ২.৩০ মিনিটে সাইমন মারা যান। রোমানিয়ায় আমরা ২০২০ এর প্রথম দিক থেকে বাস করছি। সাইমন তাঁর আত্মজীবনী লেখার জন্য এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আমাদের খুব শিগগিরই ফ্রান্সে পাড়ি জমানোর কথা ছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বন্ধু সাইমন ড্রিং আর নেই, প্রধানমন্ত্রীর শোক
একজন খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক সাংবাদিক হিসেবে তাঁর জীবনের সাফল্য ও অর্জনগুলো খুব সুপরিচিত। তিনি খুব কৌতূহলী ছিলেন এবং সত্য ঘটনা তুলে ধরার ব্যাপারে খুব আগ্রহ ছিল তাঁর। এক্ষেত্রে যতই ব্যয় হোক না কেন, সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করতেন, সেখানেই যেতেন।
প্রকৃতপক্ষে তাঁর বিস্ময়কর সাহসিকতার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার জন্য আমাদের যমজ কন্যারা অনেকদিন নাওয়া, ঘুম পর্যন্ত বাদ দিয়েছে! এটি আমাকে ও কন্যাদের তাঁর সঙ্গে ভ্রমণের সময় রাস্তায় ঘুমানোর অভিজ্ঞতা অর্জনের ব্যাপারেও সীমাহীন অনুপ্রেরণা এবং সুদূরপ্রসারী সাহস দিয়েছে।
সাইমন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কয়েকটি ছোট সিরিজ লিখতে শুরু করেছিলেন এবং অদূর ভবিষ্যতে সেগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় প্রকাশের পরিকল্পনা করেছিলেন।
সাইমন তার প্রিয় বাংলাদেশের জন্য এই বছরের শেষের দিকে একটি বড় কাজের পরিকল্পনায় অংশ নেয়ার আশা করেছিলেন। দেশটি স্বাধীনতার ৫০ বছরের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উদযাপন করছে। ইতিহাসের এমন একটি সময়কালের সঙ্গে সাইমন জড়িত যা তাঁর আত্মার সঙ্গে যুক্ত। যেন এই মাইলফলকটি মিস হলে তাঁর হৃদয় ভেঙ্গে যেত।
ফিয়োনা আরও লেখেন, আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, বিশ্বজুড়ে তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মীদের কাছে; যাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর অনন্য ইতিহাসের অংশ, আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা এত বছর ধরে প্রায় সময়ই আমাদের চিন্তাভাবনা এবং কথোপকথনের অংশ ছিলেন। টিম পেইজ, ফরহাদ মাহমুদ, বার্নার্ড, আবু আলম, এমা, ঝর্ণা, দেবেন এবং আরও অনেকেই।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফিয়োনা সাইমনের প্রথম স্ত্রী হেলেনে ও প্রিয় কন্যা তানিয়ার কথাও স্মরণ করেন। তিনি লিখেন, হেলেনেই প্রথম তাঁর (সাইমন) উত্থানকে মহান উচ্চতায় উন্নীত করেছিলেন। তাঁর বোন সু-কে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি টম, ড্যান, মিশেল, সোফি, ক্রিস, জেরেমি এবং সমস্ত ভাগ্নি, ভাগ্নে, চাচাত ভাই এবং পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি ফিয়োনা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
তাদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেন, তাঁর (সাইমন) অবদানকে মনে রেখে তাঁর উত্তরাধিকারীরা তাদের নিজস্ব অনন্য যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে থাকবে, কারণ আমরা তাদের ম্লান হতে দেব না।
আরও পড়ুন: মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকা কার্টুনিস্ট ওয়েস্টারগার্ডের মৃত্যু
প্রিয়তম সাইমনের উদ্দেশ্যে ফিয়োনা লিখেন, ইন্ডিয়া ও আভা আজ তোমার শীতল শরীরকে জড়িয়ে ধরেছে। তারা তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো তোমার কানে ফিসফিস করে বলছে এবং তোমার অত্যন্ত শান্ত মুখটিতে চুমু দিয়েছে। তুমি ছাড়া সামনে এগিয়ে যাওয়া কীভাবে সম্ভব হবে তা ভেবে আমি চিন্তিত হচ্ছি। তুমি আমার সেরা বন্ধু ছিলে। তোমার ভালবাসা এবং আমাদের দেয়া সময়ের জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। ওহ ড্রিংগো, আমরা সবসময় ভেবেছি তুমি চিরকাল বেঁচে থাকবে। আমরা কখনো তোমাকে ভুলবো না। শাশ্বত শান্তিতে এখন বিশ্রাম নাও। এটাই সময়।
আরও পড়ুন: আততায়ীর গুলিতে হাইতির প্রেসিডেন্ট নিহত